বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৭, ২০২৫

অনুবাদ কবিতা

অনুবাদক: নিত্য রঞ্জন পাল

অসম প্রণয়
সিচিং
[চীনের কবিতার সিচিং থেকে নেওয়া নাম না জানা এক কবির কবিতা। এখানে কবি
তার অনেক বেশি বয়স্ক সঙ্গীকে দেরিতে পাওয়ার কারণে বিলাপ করছেন।]

তোমার যখন জন্ম হয় আমি তখন অস্তিত্বহীন,
আমার যখন জন্ম হয় তুমি তখন প্রবীণ।
আমার জন্ম বিলম্বিত কেন তুমি করো প্রলাপ
তুমি আগেই এসেছ ভেবে আমি করি মন খারাপ।

তোমার যখন জন্ম হয় আমি তখন অস্তিত্বহীন
আমার যখন জন্ম হয় তুমি তখন প্রবীণ।
ঈশ! যদি আমাদের জন্ম হতো একসাথে
আমাদের সময়গুলো কেটে যেত বেড়াতে বেড়াতে।

তোমার যখন জন্ম হয় আমি তখন অস্তিত্বহীন
আমার যখন জন্ম হয় তুমি তখন প্রবীণ।
তোমার থেকে অনেক দূরে আমি ছিলাম
আমার থেকে অনেক দূরে তোমাকে পেলাম।

তোমার যখন জন্ম হয় আমি তখন অস্তিত্বহীন
আমার যখন জন্ম হয় তুমি তখন প্রবীণ।
আমি হতে চাই রঙিন ফুলে বসা এক প্রজাপতি
ঘুমাতে চাই সুবাসিত ঘাসে সারা দিবস-রাতি।

যদিও মৃত আমি
ইউয়ান টেন

[থাং রাজ বংশের কবি ইউয়ান টেন তার প্রেমিকা ছুয়ইইংইংকে উদ্দেশ্য করে এই কবিতা রচনা করেন। কবি এখানে বোঝাতে চেয়েছেন চারি পাশে অনেক নারী থাকলেও তিনি ইংইং ছাড়া আর কারো প্রেমে পড়তে চান না।]

যদিও জল কমে আসছে

সমুদ্রে অনেক নৌযান ভাসছে

উ-পর্বতে কুয়াশার মেঘ ওড়ে

এমন দৃশ্য দেখিনি আগে, ওরে!

 

কত ফুল আসি ছেড়ে

আর চাইনে দেখতে তারে।

প্রতিদ্দ্বন্দ্বী যতই থাক না কেন
চাইনে আমি কারেও
কেবল চাই তারে।

সন্ন্যাসী হিসেবে তীর্থ যাত্রার প্রতিদ্বন্দ্বীতা

যাচ্ছি আমি করে
আমাকে কেউ বাসতোভালো
সে কথা এখনও মনে পড়ে।

ফুলের প্রতি প্রজাপতির ভালোবাসা
লিউ ইয়োং

[প্রবাসী কবি লিউইয়োংএখানে তার একাকিত্ব ও স্ত্রীর প্রতি বিরহের কথা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন।]

সুউচ্চ পড়ো অট্টালিকার পাশে

বহে মৃদুমন্দ বাতাস

আমি তাকিয়ে অনেক দূর
আমার মন বসন্তের অবসাদে ভরপুর।

গোধূলির শিশির ভেজা ঘাস চারিদিকে

বিস্মিত করে আমাকে

কেউ কি বুঝবে আমার ইচ্ছেটা?

আমি অনেক অনেক বেশি পান করে

মত্ত হতে চাই নেশায়।

যদি কেউ মাতাল হয়
জানো তো তার গান গাইতে ইচ্ছে হয়!

আমি বিশ্বাস করি
সুরা পানের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে

কারো পক্ষে ভালো কিছু পাওয়া সম্ভব নয়।

নিঃসংকোচ আমার প্রাণ এ কথা আমি বলবই
আমার প্রণয়িনীকে পাওয়া
আমার কাছে খুবই মূল্যবান।

অবিশ্বস্ত এক স্বামীর প্রতি
টুয়ো ওয়েনচুইন

[হান রাজ বংশের কবি টুয়োওয়েনচুইন হারানো ভালোবাসার প্রতি ক্ষোভ ও অভিমান ব্যক্ত করেছেন এবং সঠিক ভালোবাসা কি সে সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন।]

পর্বতপৃষ্ঠে সাদা বরফের জেল্লা,

মেঘের মাঝে উজ্জ্বল চন্দ্র করে খেলা।
আমি জানি, তোমার সেই হৃদয় আর নেই।
অতি দৃঢ় মনে
আজকের ভোজনানুষ্ঠানে
এসেছি তাই বিচ্ছেদের ঘোষণা দিতেই।

কাল আমরা থাকবো দুপাশে পরিখার,

মাঝে জলবয়েযাবে যেখানে যাবার।

অবিশ্বস্ত স্বামী যদি করে পরিহাস

সাবধান! তোমরা কেউ ফেলো না দীর্ঘশ্বাস।

যদি কারো স্বামী হয় অনুগত তার
সাদাচুলেও স্ত্রীকে করে না পরিহার।

নমনীয় বাঁশের ছিপের অগ্রভাগে

বরশিতে মাছ যদি এসে লাগে
কথা আর কাজের প্রতি বিশ্বস্ত প্রেমিক পতি যার,

কি দরকার দেখবার অর্থ আছে কিনা তার?

আকুল আকাঙ্ক্ষা
লি পায়

[বিখ্যাত চাইনিজ কবি লিপায় এ কবিতায় একজন বিরহিনীর আকুলতা বর্ণনা করেছেন।]

শরতের বায়ু বয়

উজ্জ্বল সুধাময়,
গাছের পাতারা ঝড়ে

এলোমেলো ওড়ে,

শীতের আগমনে

কাকের ঘুম আনে
দ্রুতই জেগে ওঠে
হেথায় হোথায় ছোটে।

এমন সময়, আছি তোমার অপেক্ষায়

জানি না আর কবে দেখা হয়?
কীভাবে কাটবে এই একাকি রাত

আসবে কি আর ফিরে রঙিন প্রভাত?

তোমাকেই খুঁজছি
সিমা সিয়াংরু

[বর্তমান সিছুয়ান প্রদেশের অধিবাসী সিমাসিয়াংরু, খ্রিস্টপূর্ব ১৭৯ থেকে ১১৭ সাল, হান রাজবংশের বিখ্যাত কবি ছিলেন। প্রথম দর্শনেই কবি সদ্য বিধবা হওয়া নারী টুয়োওয়েনচুইনকে ভালোবেসে ফেলেন। তার প্রতি পাণি প্রার্থনা স্বরূপ তিনি এই কবিতা রচনা করেন।]

বারবার তোমায় দেখি মনে এই সাধ,
এক দিন না দেখিলে হই উন্মাদ।

নানা স্থানে ঘুরি আর সদা খুঁজে ফিরি,
কোথাও তোমায় আমি দেখিতে না পারি।

তোমাকে যাহা আমি জানাতে চাই,
মন মতো সেই সুর খুঁজে নাহি পাই।

মনে হয় তোমাকে বাঁধি বাহু ডোরে,
সমস্ত চেষ্টা মোর বৃথা যায় ঝরে।

লেখক পরিচিতি

নিত্য রঞ্জন পাল
নিত্য রঞ্জন পাল
কবি, অনুবাদক, দার্শনিক, চিন্তক। জন্ম: ৩১ আগস্ট ১৯৬৬ ফরিদপুর।
এ বিভাগের আরও লেখা

তবু ফুলেরা হাততালি দেয়

মধুপুর যেতে যেতে

চাইনিজ কবিতা

চাইনিজ কবিতা

অনুবাদ

সুশান্ত হালদারের কবিতা

ফেসবুক পেইজ

বিজ্ঞাপন

spot_img

জনপ্রিয় লেখা

তবু ফুলেরা হাততালি দেয়

মধুপুর যেতে যেতে

বেলা শেষের দর্শন

চাইনিজ কবিতা