ভাষান্তর: নিত্য রঞ্জন পাল
ওক বৃক্ষের প্রতি
সু তিং
[ফুচিয়ান প্রদেশের চিন চিয়ানের কবি সু তিং ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। ভালোবাসার প্রচলিত ধ্যান ধারণার বাইরে গিয়ে আধুনিক এই কবি এ কবিতাটি রচনা করেন।]
আমি তোমাকে ভালোবাসি
দূর থেকে। কিন্তু তোমার ওপর
কোনো প্রভাব বিস্তার করতে চাই না
এবং নিজেকে অনেক উঁচুতেও তুলতে চাই না।
আমি তোমাকে ভালোবাসি,
তাই বসন্তের কোকিলের মতো সবুজের সমারোহে
একসুরো গান গাইতেও চাই না।
সারা বছর দিয়ে যেতে চাই
তোমাকে শীতল পরশ;
খাড়া চ‚ড়ার ক্ষণিক তীব্র শীতের মতো নয়।
দিতে চাই সরলতা উজ্জ্বল রৌদ্র
অথবা বসন্ত-বৃষ্টি;
এসব উপমাও পর্যাপ্ত নয়।
আমি শিমুল বৃক্ষ হয়ে
তোমার পাশে দাঁড়াতে চাই
বৃক্ষের ছায়া হয়ে তোমার পাশে থাকতে চাই।
যখন বাতাস বইবে
আমরা একে অপরকে জানাবো অভিবাদন
অথচ কেউ বুঝবে না
আমাদের বিচিত্র শব্দ সম্ভার।
তোমার আছে শক্ত কাণ্ড ও শাখা
যেন ছুরি ও তরবারির মতো
যদ্ধু-কুঠারের মতো।
আমরা আছি
প্রবল শৈত্য প্রবাহে
মেঘের গর্জনে
বিশালঅগ্নিকাণ্ডে।
আমরা ভাগ করে নেই
ভীষণ কুজ্ঝটিকা
ধোঁয়ার ন্যায় কুয়াশা বৃষ্টি শেষের রংধনু।
যদিও আমরা সর্বদা থাকি
পৃথকভাবে অনেক দূর
আসলে আমরা সব সময় নির্ভর করি
একে অপরের ওপর।
একে বলে সর্বোত্তম ভালোবাসা
একে বলে সর্বোচ্চ বিশ্বস্ততা।
ভালোবাসা-
কেবল তোমার বিশাল বপুনয়।
ভালোবাসা- তোমার পায়ের তলার মাটি,
যেখানে তুমি দাঁড়াতে পারো।
কী করে ভুলবো তাকে
লিউ পান নোং
কী করে ভুলবো তাকে?
আমি ভালোবাসি যাকে।
মেঘের প্রবাহ আকাশে,
ভূমিতে কম্পন বাতাসে।
বাতাসে আমার চুল নড়তে থাকে,
আমি কী করে ভুলবো তাকে?
চাঁদের আলো ভালোবাসে পারাবার,
সাগর আনন্দে চায় হারাবার।
এমন মধুর চাঁদনি অন্ধিকে,
আমি কী করে ভুলবো তাকে?
ঝরা ফুল ধীরে ভাসে নীরে,
যেমন মাছ সাঁতার কাটে গভীরে।
তুমি কি বলছ পাখি?
আমি কী করে তাকে ভুলে থাকি?
শুকনো গাছ শীতল বাতাসে নড়ে,
কয়েক ঘাস ধুলোর মধ্যে পোড়ে।
বিরল সূর্যাস্ত মেঘ এসে ঢাকে,
আমি কী করে ভুলবো তাকে?
বৃষ্টিতে তোমার অপেক্ষায়
ইয়ু কোয়াংটোং
আমি অপেক্ষা করছি বৃষ্টিতে
যা সাহায্য করে রংধনু সৃষ্টিতে
উচ্চিংড়ে করে গুঞ্জন
ব্যাঙ ডাকে সারাক্ষণ
পদ্মে ভরেছে পুকুর
বৃষ্টিতে দিঘি ভরপুর।
তুমি আসো আর না আসো,
ভালোবাসো আর না বাসো
আসে যায় না কিছু তাতে;
তুমি আছ প্রতিটি পদ্মতে
বিশেষ করে গোধূলির কালে
বৃষ্টি যদি হয় রিমঝিম তালে।
অপেক্ষায় আছি চিরকাল ধরে
সময়ের সীমানা অতিক্রম করে
অথবা ঠিক এইক্ষণে
অথবা অনন্ত কালের মনে।
তোমার হাত যদি রাখো মোর হাতে
সঞ্জীবনী ফিরে পাই তোমার হাসিতে।
আমি অবশ্য বলতে চাই, ঠিক
তুমি আমার চিরন্তন প্রেমিক।
প্রকৃতই আজ বাড়িয়ে মোর পাণি
তুলতে চাই সেই সে প্রিয় নলিনী,
হয়তো মঙ্গোলিয়ার প্রমোদ তরীতে
আমাদের পরিণয় পারিব সারিতে।
বিজ্ঞান কেন্দ্রের কার্নিশে
ঝুলন্ত নক্ষত্র যেন পড়ে খসে,
আমার ঘড়িতে যখন সাত
তুমি এলে দৈবাৎ।
যখন বৃষ্টি এলো মুষলধারে
তুমি হাঁটছো লাল পদ্মের ওপরে,
ছোট একখণ্ড ছড়ার মতো
তুমি এলে, ভালোবাসা নিয়ে যত।
তিক্ত ভালোবাসা
লিপায়
এক রমণীয় রমণী
গায়ে মুক্তোর আবরণী
স্থির বসমান
কঠিন কষ্ট চোখেমুখে ভাসমান,
চোখে কত জল
ভাসিছে কপোল
তবু জানি না কাহারে সে করিছে ঘৃণা!
সতী নারী
মেং চিয়াও
রাজকন্যা গাছ বাঁচে একবারই
বুনোহাঁস-সঙ্গী আজীবন তারই
সতী নারী ভালোবাসে স্বামীকেই তার
শপথ নেয় সে বিশ্বস্ততার।
নড়ানো অসম্ভব তরঙ্গায়িত ঢেউ
কূপ-জল অফুরান যদি তোলে কেউ।