ভাষান্তর: নিত্য রঞ্জন পাল
বুনো হাঁসের কবরে সুরধ্বনি
ইউয়েন হাউ-ওয়েন
নশ্বর পৃথিবীতে আমি জানতে চাই-
ভালোবাসা কাকে বলে?
ভালোবাসা কি তাহলে
স্বামী-স্ত্রীর একসাথে থাকা সংসারের ছলে?
একজোড়া বুনোহাঁস যাচ্ছিল-
দক্ষিণ থেকে উত্তরের দিকে,
বহু শীত বহু গ্রীষ্ম তারা
কাটিয়েছে একসাথে সুখে।
একই জালে আবদ্ধ ছিল
প্রেমিক-প্রেমিকা অনুগত,
এই ফাঁদে আরও দীর্ঘকাল
থাকতে ছিল আগ্রহান্বিত।
বিচ্ছেদ তার জন্য খুবই বেদনার,
তার মনে উদয় হয় চিন্তার
ব্যাভিচারীর পদাংক অনুসরণ
করবে সে কীসের তরে?
কিই বা করবে সে
হাজার মাইল অতিক্রম করে
ধবল ধূসর মেঘ আর
তুষারাবৃত পাহাড়ি পথ ঘুরে ঘুরে?
ফেন নদীর এই পথের পাড়ে
বেজেছে কত বাঁশি কত নহবত,
এখন কেবল আছে পড়ে
নিরানন্দ আর বনভূমি বৃহৎ।
দৈত্যের শব্দ যায় শোনা
পাহাড়ি ভূতের আনাগোনা,
আছে বেদনার সম্ভার
আছে কেবল বৃথা হাহাকার।
স্বর্গও যেন করে হিংসে
বিশ্বস্ত এ দুটি বুনো হাঁসে।
বিশ্বাস হয় না ওরা আবার আসবে ধরায়,
সাধারণ ওসব ভরত পাখির ন্যায়।
হাজার শরৎ অপেক্ষা করবে তারা
যবে আসবে পরবর্তী প্রজন্মের কবিরা
শুনবে কবরের ইতিহাস
দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল বুনোহাঁস
সেসবের ছিল যত সব স্মৃতি
হয়তো লিখবে তারা ছন্দময় গীতি।
অসমপ্রণয়
চিনের প্রাচীন গ্রন্থ সি চিং থেকে
[চীনের কবিতার সিচিং থেকে নেওয়া নাম না জানা এক কবির কবিতা। এখানে কবি তার অনেক বেশি বয়স্ক সঙ্গীকে দেরিতে পাওয়ার কারণে বিলাপ করছেন।]
তোমার যখন জন্ম হয় আমি তখন অস্তিত্বহীন,
আমার যখন জন্ম হয় তুমি তখন প্রবীণ।
আমার জন্ম বিলম্বিত কেন তুমি করো প্রলাপ
তুমি আগেই এসেছ ভেবে আমি করি মন খারাপ।
তোমার যখন জন্ম হয় আমি তখন অস্তিত্বহীন
আমার যখন জন্ম হয় তুমি তখন প্রবীণ।
ঈশ! যদি আমাদের জন্ম হতো একসাথে
আমাদের সময়গুলো কেটে যেত বেড়াতে বেড়াতে।
তোমার যখন জন্ম হয় আমি তখন অস্তিত্বহীন
আমারযখন জন্ম হয় তুমি তখন প্রবীণ।
তোমার থেকে অনেক দূরে আমি ছিলাম
আমার থেকে অনেক দূরে তোমাকে পেলাম।
তোমার যখন জন্ম হয় আমি তখন অস্তিত্বহীন
আমার যখন জন্ম হয় তুমি তখন প্রবীণ।
আমি হতে চাই রঙিন ফুলে বসা এক প্রজাপতি
ঘুমাতে চাই সুবাসিত ঘাসে সারা দিবস-রাতি।
রূপবতী লু
নালান সিংতা
ব্যস্ততম জীবনের কঠিন বক্র পথে
আবার দেখা হয়েছিল আমাদের একসাথে।
সে তখন ভাসিয়েছিল অন্তর থেকে কেঁদে
কাঁপছিল আলিঙ্গনে আমাকে বেঁধে ।
বিচ্ছেদটা কষ্টদায়ক আমাদের কাছে
নিঃসঙ্গতার অনুভূতি দুজনেরই আছে।
সেই সে একাকিত্ব হয় যদি চাঁদনি রাতে
অসহ্য যন্ত্রণায় হয় আমায় কাটাতে।
তার মুখের সাজের রঙে বালিশ যেত ভিজে
এমন দৃশ্য দেখে আমার কষ্ট হতো কী যে!
মনোহরা স্মৃতিগুলো আজও পড়ে মনে
কাটে সময় আমার আজি স্মৃতি রোমন্থনে।
শ্রেষ্ঠতম নকশা ছিল সেটা আমার কাছে
স্কার্টে তার সকল কিছু অংকিত রয়েছে।
একজন বিশ্বস্ত বধূর জবাব
টাংচি
আমার বিবাহ হয়েছে সদ্য, জানাইতা স্পষ্ট
তোমার প্রেরিত মুক্তো আনে মোর মনে কষ্ট।
তোমার ভালোবাসায় মন মোর কাঁদে
রেখেছি মুক্তো দুটো লালসালুতে বেঁধে।
তুমি থাকো সুউচ্চ অট্টালিকা‘পরে,
প্রহরী আমার স্বামী রাজার দরবারে।
চন্দ্র-সূর্যের মতো সত্য তোমার ভালোবাসা,
স্বামীতে বিশ্বস্ত থাকি- এ আমার আশা।
তোমার মুক্তো দুটো ফেরাই চোখের জলে
বিয়ের আগে দেখা কেন হয়নি কোনোকালে?
দৈবাৎ
সু টিমো
[আধুনিক চাইনিজ কবিতার জনক সু টিমো, ১৮৯৭ থেকে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ, লিন হুইইনের প্রেমে পড়েন, যা তাকে এই কবিতা লিখতে উদ্বুদ্ধ করে। একটি স্তবকে লেখা এটি একটা সেরা শিল্পকর্ম। এটি কেবল একটা কবিতাই নয়, তার জীবনের দীর্ঘশ্বাস মাত্র। মাত্র চৌত্রিশ বছর বয়সে তিনি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন।]
আমি আকাশের এক টুকরো মেঘ
দৈবক্রমে ছায়া ফেলেছে তোমার মনে;
হয়ো না স্তম্ভিত
অথবা আহ্লাদিত
কারণ, আমি হঠাৎই উবে যেতে পারি
তোমার দৃষ্টির বাইরে।
তোমার আমার মিলন হতে পারে
সাগরে নিশার তিমিরে।
তোমার গন্তব্য তোমার কাছে
আমারটা আমার;
তুমি আমাকে স্মরণে রাখতে পারো,
যদিও এটাই শ্রেয়
যদি আমাকে ভুলতে পারো।
আমরা আমাদের ভিন্নভিন্ন পথ
অতিক্রম করে যাব
এবং উজ্জ্বল দীপ্তি ছড়াবো।