বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৭, ২০২৫

মধুপুর যেতে যেতে

মধুপুর যেতে যেতে

ইদ্রিস কাজল

নির্বাচিত নির্দিষ্টির নির্ধারিত বার্তা পবিত্র গৃহ থেকে

বিবর্তন

সেইন্ট বললেন, কেন এমন হয় ইডাসিয়াস!
ইডাসিয়াস বললেন, তুমি কি একই পিতা-মাতা, বৃক্ষ-তরুলতা, পশু-পাখিসহ তাবত সৃষ্ট থেকে সৃষ্টির ভিন্ন মনন আর আচরণের কথা বলছ?
সেইন্ট বললেন, নিশ্চিতই এইরূপ মনোভাব ইডাসিয়াস।
ইডাসিয়াস বললেন, তুমি খেয়াল করলে পাবে, প্রতিটি সৃষ্টের ভেতরে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের বীজ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে প্রকৃতিই উতপাদন করে থাকেন। নিশ্চয়, বিবর্তন প্রকৃতির মীমাংসা। আমরা তার কিছুই জানি না।

কর্ম ও ধর্ম

ইডাসিয়াস বলিলেন, তুমি তো কেবল ধর্মের বাণি প্রচার করিয়া থাক। এইরূপ কর্মে কিভাবে ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হতে পারে!
সেইন্ট বলিলেন, আমি মানুষকে সৎ পথে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকি।
ইডাসিয়াস বলিলেন, এই সৎ পথে চলার পরামর্শ তুমি কোথা থেকে পেয়েছ?
সেইন্ট বলিলেন, মহান স্রষ্টার দয়ায় আমাদের নবীর মাধ্যমে পেয়েছি।
ইডাসিয়াস বলিলেন, তুমি যা প্রচার করিয়া থাক, সবই কি নবীর মাধ্যমে প্রাপ্ত?
সেইন্ট কী যেন ভাবছিলেন!
ইডাসিয়াস বলিলেন, তুমি কি অস্বীকার করিতে পারিবে, নবীর নাম করে তোমার জীবনধারণ সহজি করণের কোন উপায় বের করনি?
সেইন্ট বলিলেন, ইহা ছাড়া আমি কী করিতে পারিতাম?
ইডাসিয়াস বলিলেন, একটি উপায় হল, শুধু সত্য কথা বলা। অন্যটি হল, সত্য কাজ করে যাওয়া। তুমি সত্য কাজটি করে যেতে পারতে! সত্যের পরিবেশ তৈরি করতে পারলে মানুষের কাছে কিছু নিদর্শন দৃশ্যমান হত! নিশ্চয়, কর্ম দিয়ে ধর্ম প্রতিষ্ঠিত করা, বাণী প্রচারের চেয়ে উত্তম।
সেইন্ট ইডাসিয়াসের চোখের দিকে তাকালেন।
ইডাসিয়াস বলিলেন, তোমার কর্মে যদি ধর্ম প্রতিষ্ঠিত না হয়। তবে তোমার এই প্রচার প্রসারেই সীমাবদ্ধ থাকবে, আখেরে তুমি দণ্ডিত হবে নিজের কাছেই।
পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারার আট নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন,’আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়।

সেইন্ট

মধুপুর। গহীন অরণ্যের ভিতর তেমাথায় বসে থাকেন এক লোক। দৃষ্টির সীমা থেকে দেখলে মনে হয় একটি ধ্যানী শকুন বসে আছে। কাছে গেলে কংকালসার এক মানব!মাথা নিচু। কোন আগুন্তুকের সাড়া পেলে লাল চোখ দুটি কোটরের ভিতর থেকে এক পলক তাকান। সামনে একটি ভাঙা টিনের থালা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে গভীর জংগলের দিকে নিরুদ্দেশ হয়ে যান।

জনমানব শুন্য এই গহীন অরণ্যে দিনের পর দিন বেঁচে আছেন তিনি!
ইডাসিয়াস মাঝে মাঝে এই পথে আসেন। যান। ইডাসিয়াস দাঁড়ালেন। তাঁকে দেখে লোকটি উঠে দাঁড়ানোর ভঙি করলেন।
দগদগে পায়ের ঘা। শক্ত লাল মাটিতে আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পায়ের ঘা ফেঁটে রক্ত ঝরে। কসরত করে কোনো রকমে উঠে দাঁড়ান।
পায়ের দিকে তাকিয়ে ব্যথায় কুকড়ে মুচড়ে বলতে থাকেন, ক্যা শালা, ক্যা শালা!
বলে অট্ট হাসিতে অরণ্য প্রকম্পিত করে তুললেন।
ইডাসিয়াস অস্থির বোধ করলেন।

শক্তি

ইডাসিয়াস বললেন, তুমি কি জান মৌমাছিরা সারাদিন বিভিন্ন ফুল থেকে নেক্টার, পোলেন, গাছের কষ, নর্দমা থেকে জল সংগ্রহ করে কেন বাসায় ফেরে? কেন সে ভুল করেও অন্য কোন বাসা কিংবা সমাজে সমাজভূক্ত হয় না?
সেইন্ট বললেন, নিশ্চয় অদৃশ্য কোন শক্তি তাঁদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
ইডাসিয়াস বললেন, সেই শক্তির নাম মায়া। তুমি তাকে ধর্ম ও বলতে পার।

জীব ও জড়

ইডাসিয়াস বললেন, জীব এবং জড় বস্তু সম্পর্কে আমাকে কোন ধারণা দিতে পারবে?
সেইন্ট বললেন, প্রাণ দুই রকম: জীব এবং জড়।
জীব হল,জীবন্ত। চাক্ষুস ক্রিয়ায় যে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।
জড় হল,ঘুমন্ত। চাক্ষুস ক্রিয়ায় যে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে না।
জীব হত্যা মনের কোথাও প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। জড় হত্যায় এইরূপ ঘটে না। তুমি নিশ্চয় জেনে থাকবে, আমি জড় বস্তু ভক্ষণ করে জীবন ধারণ করি।

জাদুকর

সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, শোক-ঝরা প্রভূত উঠকো ঝামেলা এড়িয়ে চলেন ইডাসিয়াস। সব সময় পারেন না। নিজ এবং লালিত প্রাণীদের জন্যে খাদ্যের সন্ধানে তাকে মাঝে মাঝে লোকালয়ে যেতে হয়। ইডাসিয়াস কিছু স্বপ্ন নিয়ে কবর স্থানের পাশ দিয়ে ফিরছিলেন । হঠাৎ, কারো ডাকের শব্দ ভেসে এলো কানে।
ইডাসিয়াস!
ইডাসিয়াস দাঁড়ালেন। এবং বললেন, তোমাকে ঠিক চিনতে পারলাম না!
আমি জাদুকর ক্যাকটাস। আপনাকে একটি জাদু শিখাব বলে এখানে বসে আছি।
আমি জাদু শিখে কী করব?
শত্রুদের শায়েস্তা করবেন!
শত্রু কে?
ক্যাকটাস অট্টহাসিতে আকাশ-পাতাল ওজকেয়ামত করে তুললেন। ক্যাকটাসের হাসি ইডাসিয়াসের কাছে ভীবিষিকাময় মনে হল।

বহুদিনপর, আগুন প্রতিরোধক মেশিনের ডায়াগ্রাম করার সময় আগুনের কাছে পরামর্শ চাচ্ছিলেন ইডাসিয়াস। আগুন বললেন, তুমি ক্যাকটাস জাদুকরের কাছে যাও। একটা কাটা তুলে তাকেই বিদ্ধ করো।

মোকাম

পৃথিবীর দলভূক্ত প্রাণিদের একদলের ন্যায় কর্মকে অন্যদলের কাছে অন্যায় কর্ম বোধ হতে পারে। এবং যখন সে বলবে, তোমরা কয় ভাই?
উত্তরে অন্যরা বলবে, আমরা এ্যবাই।

তাদের কর্ম ধর্ম তৈরির প্রধান অন্তরায়। তারা দৃঢ়কন্ঠে বলবে, মালিকের নামে দাও। অথচ নিশ্চিতই অন্তরে ধারণ করে, নিজে খাইয়া বাঁচি।

তারাই মূলত নীতি প্রণয়নকারী জ্ঞানপাপী,যা নির্দিষ্টির নির্ধারিত নীতির পরিপন্থী।

তারা কি জানে না, নিশ্চয়ই, নিশ্চয়তা নিশ্চয়তা হীন!

অক্ষচূত কক্ষপথ থেকে

সুলতানের হরিণ

আজন্ম শীতার্ত সুলতানকে মাঝে মাঝে চাপড়ি বাজারে দেখা যেত। কখনও উচ্চস্বরে গালি দিতে দিতে হেঁটে যেতেন। এই প্রতিক্রিয়াটি যে ক্রিয়ায় সংঘঠিত হত তার উতসমূল পাওয়া যেতো না!
“বুঝবা কী বালডা,মা মরলে বুঝতা।”
সুলতান কদাচিৎ হাত পাততেন কারো কাছে। এক টাকার জন্যে। হরিণ মার্কা নোট।
আর বলতেন, বুঝবা কী বাল্ডা, মা মরলে বুঝতা…

লেখক পরিচিতি

ইদ্রিস কাজল
ইদ্রিস কাজল
জন্ম: ৫ ডিসেম্বর ১৯৮৫, জয়নাতলি, দড়িহাতিল, মধুপুর, টাংগাইল। বাবা: ইসমাইল হোসেন, মা: রহিমা খাতুন। পড়াশোনা: ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক। পেশা: শিক্ষানবিশ কৃষক। প্রাণ-প্রকৃতি ভালবাসেন। গান লিখেন, নিজের সুরে গেয়ে থাকেন। প্রকাশিত গ্রন্থ : ঠিকানা ভুল ছিল (উপন্যাস), Filling up banks on the answer sheet (Poetry Translated by Aolad Hosen), হুমায়ূন চরিত্রের মনস্তত্ত্ব (প্রবন্ধ-গবেষণা), সম্পাদনা: সৃজন ও মননভূমির কাগজ ঋণপত্র ও বীক্ষণ (ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের প্রান্তিক প্রকাশনা)
এ বিভাগের আরও লেখা

তবু ফুলেরা হাততালি দেয়

সুশান্ত হালদারের কবিতা

শৈবাল নূরের কবিতা

শুভ্র সরকারের কবিতা

রোজেন হাসানের কবিতা

অনুবাদ কবিতা

ফেসবুক পেইজ

বিজ্ঞাপন

spot_img

জনপ্রিয় লেখা

তবু ফুলেরা হাততালি দেয়

বেলা শেষের দর্শন

চাইনিজ কবিতা

জমে থাকা অন্ধকারের গল্প