রোজেন হাসান
বলিভোলা
আমি শুনতে পাই
করিডরে কারা যেন হাঁটে
হাওয়ায় গাছের
ঝুরির মতো এই পৃথিবী
আমাকে ত্যাগ করছে
বলিভোলা নামে এক অদ্ভুত মানুষ
আমাকে পৌঁছে দিয়েছে এই স্বপ্নের মরুভূমিতে
আমি হয়ে উঠি তার হাওয়া
বলিভোলার হৃদয়ে যত ফুল
দেবতাদের আদিম ইশ্বরের
নৌকোয় আমার ঠাঁই নেই
তাই আমি গড়েছি এই পৃথিবী
কক্ষপথে ঘোরার নিজস্ব ঘোড়া
আমার বাবা, আমার নৌকো
আমার স্ত্রী আর পলায়নপর বলিভোলা।
লাভা পাথর
ভলকানোর লাভাপাথরে নিভে যাওয়া কক্ষপথ
বাসস্টপে শ্রমিক মেয়ের দাঁড়িয়ে থাকার অবয়বে
ধরা দেয়, তার শস্যহীন সিরামিকের কর্ণিয়া
বালির ছাইদানিতে জ্বলছে তুষার ভালুকের নাক
তার দাঁতপাটি শামুকের হৃদয়ের বালি
এই ভয়ংকর নিরাশায় মৃত বস্তু সব
একে অপরের স্থান বদল করছে
আগুন তার পেঁচার পালকের খাঁজে দ্যুতির সমুদ্র
হরিণেরা শিকার করে আমাকে অশ্রুর জঙ্গলে ।
পৃথিবীর বাইরে
বৃষ্টি হচ্ছে সারাদিন, শহর, রাস্তা জলের
তোড়ে ডুবে গেছে, পাথরগুলো বেড়িয়ে এসেছে পুকুর-
নদীর জল সীমানা থেকে
মধ্যবয়সী এলিয়েনের এক দোকানে খাঁচায় বন্দী
একটি নি:সঙ্গ হাঁস, তার সামনে রাস্তায় পাথরেরা
জলকেলি করছে, বাদমি-কালো
টিভিরা, ফড়িঙ উপস্থাপিকারা
ঘরগুলো থেকে বেড়িয়ে আসছে
খরিদ্দারহীন চারপাশ
সবাই নীল ঘোড়াকে নিয়ে ব্যস্ত
হাঁসটির চোখে তখন মেঘের কথা
এসব আনন্দ থেমে গেলে
কোনো এক এলিয়েন তাকে নিয়ে যাবে
রাতের ডিনার টেবিলের জন্য
এলিয়েন পৃথিবীর এই ঘনঘোর বৃষ্টিদিনে
তার আর চাইবার কিছু নেই।
সংরক্ষণ
সমু্দ্রকে তারা মেরে ফেলেছিল
একটা পঁচা পেয়ারার মাঝে
আমি
লুকিয়ে ছিলাম
একজন ইতিহাসবিদের মেয়ে।
যিশু ও জুদাস
সূর্যর যে ঘরে আমি থাকি
তার পাশে আমার জুদাসের ঘর
আমাকে স্পেনের বিষাদ রাণীর লালা মিশ্রিত শস্য
তুলে দিতে হয় তার খোলা চঞ্চুতে।
সূর্যবালি, থুনিমানকুনি পাতা, পাথরকুচি
আর আমার ঝলসে যাওয়া আত্মা
এসবকিছুই তার খাদ্য।
সালামিরা
মাঠের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি
সালামিরা নামে এক গ্রাম ছিল এখানে
এর অর্থ সন্ধ্যা
প্রাচীন ভাষা পরিবারের এই
ভাষা, এখন বিলুপ্ত।
আমি যেখানে দাঁড়িয়েছি
সেখানে একটা ভালুক
শূন্যতার অতল ভাষায়
প্রেমে পড়েছিল
প্রতিদিন সে রাত্রিতে এসে
ডাকত
মেয়েটি সাড়া দেয়নি
মেয়েটি জানত সালামিরা
শূন্যতা আর প্রেম
মৃত্যু ডেকে আনে
ভালুকটি সেই ফাঁদে পড়েছে।