শৈবাল নূর
পারমার্থিক
আরেকটি দিন কী ফুরিয়ে এলো পাখিদের পিছু পিছু!
সাহেব বুলবুলির তরঙ্গ উড্ডয়নে হারিয়ে ছিলাম
বিজন সে বাঁশবনে। এ বুকে করতালির মতো
ধ্বনিত হলো কী ছন্দময় বন্যাঘুঘুর ডানা! আর
সবুজের ফাঁকে ফাঁকে হড়িয়ালের প্রেম-খুনসুটি
আমাকে ভোজন বিমুখ রাখলো সারাদিন!
স্বরাজের টুংটাং সুরের মতো টুনটুনির নৃত্য-মাতম
মৃদুলা কাঁপছে তার বিলাসী মিলনপাতার নীড়—
ওই-তো আমার চোখ আড়াল করে অরণ্য আঁধারে
হারিয়ে গেলো কী পতঙ্গ-প্রেমী বিনীত বনমোরগ!
সেই শৈশবে ফেলে আসা জঙ্গল— যেখানে আজও
গাবফলের মৌসুম জুড়ে, স্মৃতিরা হাত ঢুকে দেয়
গাঙশালিকের ডেরায়! আর সেখানেই বসে বসে
পোহালাম জোহোরের তেছড়া পাতাফালি রোদ—
পিতরাজের শুষ্ক পাতা উড়ছিলো, চোখের পাপড়িময়
দূর হতে ধেয়ে আসা বাষ্পীভূত মরমি বেহাগ নিয়ে—
ছুটির দিন
শুক্রবার এলেই কচি নিমপাতার শুশ্রূষা
মিথ্যে হয়ে ঝরে মুখে, আমাদের অতীতে—
নামাজের আগে খুতবার ঘুমো ঘুমো অবচেতনের ভেতর
ব্যক্তির সমস্ত অন্ধকার জুড়ে রেসের ঘোড়া দৌড়ায়
মা কি মৌসুমি ফুল ? ভ্রষ্ট হয় মৃত্তিকায়, বাবার বুকে
ফুলেদের অবকাশ ঝরে যাওয়া নয় তো!
মহামারি
বিষবীথি পথ
নীলজল চুপ
মধ্যরাতে একহাতে কূপ !
কতদূর পরে
মৃত্যুচিতা, গোরখানা
মানুষ কি ছুঁয়েছিল গাঙশালিকের ডানা?
গর্ভকালীন
মহারাত ঘুমিয়ে পড়ো পাশে
যেভাবে নিদ্রাতুর আমার অন্তঃসত্ত্বা প্রেমিকা
তার মাথায় হাত-বুলিয়ে দেই, আমি বাবা হবো—
তুমি ছাতিমফুলের ঘ্রাণের মতো দীর্ঘ হইও না আর
ভেতরের পুরুষ যদি একা হয়ে যায়!
প্রবহমান
মাঝরাতে এ রিপুপ্রবণ শরীর ও মনস্তত্ত্ব জুড়ে
বায়বীয় নীল সুর তৈরি হয়—
যা আমার দ্বিধার সীমারেখা ধরে
ফুটিয়ে তোলে অর্বুদ জলবিম্ব—
তখন কে আমি ? কোনো ছায়াপ্রতারণা? মৃত্যু?
রুধির প্রবাহে আমি তো শুধু স্মৃতির স্তুপ
জৈব মাংসপিণ্ড—
এসেছি মাতৃজরায়ু থেকে গর্ভাগারে
যাব দেহ থেকে দেহান্তর…