শুক্রবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৫

ফিলিস্তিন

ফিলিস্তিনিদের রক্ত, অশ্রু ও ভাগ্য

জহির হাসান

ফিলিস্তিন তিন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের পবিত্রভূমি। ইতিহাসে দেখা যায় ফিলিস্তিনি নেটিভ মুসলিম-ইহুদি-খ্রিস্টান ও তাদের নিজেদের মধ্যে নানাবিধ লেনদেন ও সামাজিক ঐক্য ও সম্প্রীতি মধ্য দিয়ে হাজার হাজার বছর ধরে বাস করি আসছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পূর্বাপর ও ২য় বিশ্বযুদ্ধে ও হলোকোস্টের সময় বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলাতে মুসলিমরাই ইহুদিদেরকে আপন ভাইয়ের মতো করি হত্যা নিধন বিতাড়ন থাকি রক্ষা করছিল। এখনও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কোনো খ্রিস্টান ও ইহুদি বিদ্বেষ নাই। অটোমান সাম্রাজ্যের পতন হইতেই ফিলিস্তিনিদের ভাগ্যে নামি আসে জায়োনিস্ট ইহুদিদের বর্বরতার নির্মম কষাঘাত। এইখানে স্মরণযোগ্য যে, যদি আমি এটা এখন প্রকাশ্যে বলি, তাহলে আমি হয়তো দুনিয়াজুড়ে হাসির খোরাক হবো। তবে সম্ভবত ৫ বছরের মধ্যে এবং নিশ্চিতভাবে ৫০ বছরের মধ্যে সবাই এটা দেখতে পাবে।’ অস্ট্রিয়ার ইহুদি সাংবাদিক, নাট্যকার ও রাজনীতিক থিয়োডর হারজেল তাঁর ডায়েরিতে ১৮৯৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এইটা লিখছিলেন। ওয়ার্ল্ড জায়োনিস্ট কংগ্রেসের সপ্তাহখানেক আগে সুইজ্যারল্যান্ডের ব্যাসেলে প্রথম বিশ্ব ইহুদিবাদী সম্মেলন হয়। তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনে শুধু ইহুদিদের লাগি একটা স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের রূপরেখা দেয়া হয়। থিওডর হারজেলই এর মূল উদ্যোক্তা। ১৮৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর লেখা ইহুদি রাষ্ট্র (দ্য জিউইশ স্টেট) প্রকাশিত হয় অস্ট্রিয়াতে। এই পুস্তকে ইহুদিদের নিজস্ব আবাসভূমি ও জাতি-রাষ্ট্র গঠনের যাবতীয় পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ বিষয়ে সংক্ষেপে বিস্তারিত নীল নকশা বর্ণিত হইছে। হারজেল ও তাঁর সহযোগীরা মনে করতেন যে, ইহুদিবিদ্বেষ ঠেকানোর রাজনৈতিক সমাধান হইলো একটা স্বতন্ত্র ইহুদি রাষ্ট্র। সে উদ্দেশ্যেই ১২৫ বছর আগে ব্যাসেলে ইহুদিবাদীদের প্রথম সম্মেলন হয়। সেই সম্মেলনের পর হারজেলের নিজ ডায়েরিতে লেখা ভবিষ্যদ্বাণী যে বাস্তবে রূপ নিবে তা তিনি চোখে দেখি যাইতে পারেন নাই।


৭ অক্টোবর হামাসের হামলা কোনো সন্ত্রাসী হামলা নয়, এইটা ৭৫ বছরের সকল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল রাষ্ট্র ও অবৈধ সেটেলারদের প্রতি সর্বপ্রকার অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ।



মাত্র ৪৪ বছর বয়সে ১৯০৪ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। তবে ওই সম্মেলনের ৫১ বছর পর ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইহুদিদের স্বতন্ত্র অবৈধ রাষ্ট্র হিসেবে আরববিশে^র বুকে জঘন্য বিষফোড়া ইসরায়েল আত্মপ্রকাশ করে।
সমগ্র ইউরোপ, রাশিয়া, আমেরিকা, আফ্রিকা ইত্যাকার দেশ হইতে জায়োনিস্ট মতাদর্শে বিশ্বাসী যে ইহুদিরা মাইগ্রেট করে আসে প্যালেস্টাইনে তারাই আজ ইসরাইলে উগ্র ডানপন্থী। এরাই ঘুরে ঘুরে সরকার গঠন করে। এদের প্রায়ই সবারই দ্বৈত নাগরিকত্ব রইছে। ইসরাইয়েল তাদের হোমল্যান্ড না, এইটা তাদের জোরপূর্বক বসতি স্থাপন ও পৌরানিক বানোয়াড মিথ ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত পবিত্র পূন্যভূমির চোজেন পিপলদের অন্যায় দাবি পূরণের বাহানায় থিওডর হার্জেলের ইহুদিদের মাতৃভূমি তল্লাশে ও ব্রিটেন ইউরোপ আমেরিকার নিজেদের কান্ধের ভূত কলোনিয়াল প্রজেক্টের আওতায় জায়োনিস্টদের জোরপূর্বক ফিলিস্তিনিদের কান্ধে চাপাই দেয়। ঈশ্বরের জায়োনিস্ট ও চোজেন পিপলরা’ কত বিচিত্র বিভৎস অবিবেচক হয় তা জগতের মানুষরা তো ১৯৪৮-৪৯ সালের ১ম নাকবা ও পরবর্তী ৭৫ বছর এবং ৭ অক্টোবর ২০২৩ পরের ২য় নাকবাতে ফিলিস্তিন ভূমিতে আমারা জগৎবাসী দেখতেই আছি। গাছ তোমার নাম কী ফলে পরিচয় কথাডারে স্মরণ করায়ে দেয়। কেউ হয়ত ভাবতে পারেন যে এই ধরনের ঘৃণাই এন্টি সেমিটিসিজম। মোটেও না। এইখানে মনে রাখতে হবে যে জুড়াইজম ও জায়োনিজমের পথ আলাদা। এইখানে জায়োনিস্টদের ফিলিস্তিনিদের উপর অবিরাম অবিচার, অন্যায়, ঘৃণা, অবিবেচনা, নিপীড়ন চাপানোর কথা বলা হইতেছে। এন্টিসেমিটিসিজ হইবে বলি অবিচার অন্যায়কে সমালোচনা করা যাইবে না- এইটা জায়োনিস্টদের একটা কৌশল। নিরিহ ফিলিস্তিনিরে হত্যা, বিতাড়ন, ভূমি, বাড়িঘর দখল, কারাবরণ, অভিবাসন, স্থানচূত্য, নির্বাসন, ক্ষতিসাধন, চলাফেরাতে বাধাদান, নাগরিকত্বহরণ, পরিচয়হীন করি তোলা, আজীবন শরণার্থী ক্যাম্পজীবন বরণ করতে বাধ্য করা নিত্য ঘটনা।
হামাসের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র মুক্তিকামী গোষ্ঠী ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ই অক্টোবর গাজা উপত্যকা থাকি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যে বড় আক্রমণ পরিচালিত হয় তার নাম অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড। ইসরায়েলের প্রত্যাক্রমণের নাম অপারেশন আয়রন সোর্ডস। হামাস কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন নয় তারা ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষের প্রতিবাদ-লড়াইয়ের সংগঠিত করার নেতৃত্ব দেয়। ফিলিস্তিনিদের ইন্তিফাদারে জারি রাখে ফিলিস্তিনিদের বুকে। মূলত ফিলিস্তিনিদের ন্যায় সংগত সশস্ত্র সংগ্রামের পথে হাটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই যাদের লক্ষ্য।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী পারিচালিত অপারেশন আয়রন সোর্ডস পরিচালিত নৃশংস গণহত্যা, গাজার সকল স্থাপনা, হাসপাতাল, স্কুল কলেজ বাজার মসজিদ মাটির সাথে মিশায়ে দেয়া ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে অপরাধ জ্ঞানের শামিল। তারা ফিলিস্তিনের জনগণরে পশুতুল্য অসভ্য নিম্নপ্রজাতির জাতিগোষ্ঠী মনে করে।
ফলে জ্ঞানে বিজ্ঞানে টেকনোলোজিতে অত্যাধুনিক অস্ত্রের উৎপাদনকারী ও ব্যবহারকারীকারী নীল রক্তের অভিজাত ভদ্রলোক শ্রেণির আগায়ে থাকা ‘মানুষ’ প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত শুধু তারাই। তাই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিনিদেরকে হিব্রু বাইবেলে বর্ণিত পশুতুল্য নেটিভ আমালেকদের সাথে (Amakek) তুলনা করছে। আমালেকদের হত্যা করা ছিল করাপটেড ওল্ড টেস্টামেন্টে একটা জায়েজ ঘটনা। ঈশ্বর স্বয়ং আমালেকদের নাকি হত্যার কথা কইতেছেন সেইখানে। কেননা তারা কেনানের আদিবাসী তাদের উৎখাতের মধ্য দিয়া কেনান দখলেরর আদেশ তারা ঈশ্বরের নিকট থাকি পাইছে। তাই পশুহত্যার জন্য যেমন কোনো জবাবদিহিতা লাগে না, পশুতুল্য আমালেক তথা ফিলিস্তিনিদের হত্যায় কোনো জবাবদিহিতা লাগে না। একজন ইসরাইলি সৈন্য মারা গেলে যে খবর হয় এক হাজার ফিলিস্তিনি মারা গেলেও তার খবর হয় না। কারণ তা কোনো ঘটনা নয় ইতিহাসের। তাই বুঝি পশ্চিমা মিডিয়াগুলিতে ফিলিস্তিনি হত্যা কোনো ঘটনা নয় তাই তার খবর প্রচার আর ঝড়ে কলাগাছ নিহত হওয়া তাদের কাছে সমার্থক। এ হেন দৃষ্টিভঙ্গি শুধু ইসরায়েলের নয় ইউরোপ, আমেরিকা ও অন্যান্য ইহুদি সমর্থিত রাষ্ট্রও ফিলিস্তিনিদের ‘অমানুষ’ই মনে করে। আদিবাসী ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘ দিন ধরি গণহত্যার শিকার হয় কিন্তু পৃথিবীর গুটিকয়েক বুদ্ধিজীবী ছাড়া অধিকাংশ ইউরোপীয় বুদ্ধিজীবী ও দার্শনিকরা গাজায় সংঘটিত চলমান গণহত্যাকে সমর্থন দিতেছে। তারা ১০০০ (এই সংখ্যাও ভিত্তিহীন!) ইসরাইয়েলি হত্যা ও ২৫০ আটককৃত জিম্মিদের শোক কোনো ভাবেই ভুলতে পারতেছে না। ফিলিস্তিনিরা তাদের কাছে কেবল সংখ্যামাত্র।
গাজা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অপেন এয়ার প্রিজন। গত ৭৫ বছরের সকল হত্যা নিপীড়ন কারাবরণ নিষ্পেষণ থাকি ৭ অক্টোবরের ঘটনারে বিচ্ছিন্ন হিসাবে বিবেচনা করতেছে। হত্যার বদলা নিতে গাজার ২২ লাখ মানুষকে উৎখাত করছে । তাদেরকে আফ্রিকা বা আরব মরুভূমি বা অন্য কোনো আরব দেশেতে পাঠায়ে দেয়ার কথা ভাবতেছে। কিন্তু গাজা চিরকালের মতোই ফুসি উঠছে অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা কোনো সন্ত্রাসী হামলা নয়, এইটা ৭৫ বছরের সকল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল রাষ্ট্র ও অবৈধ সেটেলারদের প্রতি সর্বপ্রকার অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ। কারণ ফিলিস্তিনি লাইফ ম্যাটারস।
গাজার যুদ্ধ সবার মুখোশ খুলি দিছে। ৭ অক্টোবর অবৈধ ভূমি দখল ও দস্যুতার বিরুদ্ধে অবৈধ ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতি একটি প্রত্যাঘাত, ৭ অক্টোবর অবৈধ জায়নবাদী ইসরায়েলের সেটেলার কলোনিয়ালিজম প্রজেক্টের প্রতি একটি মুখরিত চিৎকার ও শিক্ষা,৭ অক্টোবরের আঘাত ১ম নাকবার ভয়াভয়তা ও দুর্দশার বহুদিনের জমানো সশস্ত্র একটা উত্তর, ৭ অক্টোবরের আঘাত ফিলিস্তিনিরা সকল অত্যাচার সহ্যের পরও এখনও সম্পূর্ণ অদৃশ্য হই যায় নাই তার জাগান দেয়া, ৭ অক্টোবরের আঘাত ফিলিস্তিনিদের এথনিংক্লিনজিং এর বিরুদ্ধে একটা উচিত জবাব, ৭ অক্টোবরের আঘাত নিরাপরাধ ফিলিস্তিনিদের কারাকরণ ও কারাগারে অমানবিক আচরণের সদুত্তর, ৭ অক্টোবরের আঘাত ফিলিস্তিনিদের সাথে একটানা বর্ণবাদী আচরণের সমুচিত জবাব, ৭ অক্টোবরের আঘাত ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ন্যারেশন ও মিথ চালু রাখার কাজে ব্যস্ত মিডিয়া প্রচারণার বিরুদ্ধে পাথর ছোড়ার দৃশ্যের বিকল্প প্রদর্শনী, ৭ অক্টোবরের আঘাত চিরকাল অসমযুদ্ধের দায় হইতে উঠি দাড়ানোর পাল্টা শক্তির প্রদর্শনী, ৭ অক্টোবরের আঘাত ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়া একের পর এক আরবদেশ ইসরায়েলের সাথে নরমালাইজেশন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের প্রতি দিশাদানের জানান, ৭ অক্টোবরের আঘাত মাটি, মানুষ, অলিভ আর বিষন্ন কমলার দেশ ইয়াফা, হাইফা, পূর্ব জেরুজালেম আর আক্কা নগরীসহ ৪০০ গ্রাম নিশ্চিহ্ন করার স্মৃতির প্রতি উৎসর্গিকৃত, গৃহহারা ৭ লাখ শরণার্থী ফিলিস্তিনিদের নাকবার সমুচিত উত্তর, ৭ অক্টোবরের আঘাত দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধানের নামে ধীরে ধীরে ফিলিস্তিনিদের উধাও প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে গা ঝাড়া দিয়া উঠার একটা চূড়ান্ত জাগান দেয়ার অভিমুখ, ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনিদেনর জন্য ছিল একটা ডু অর ডাই সিচুয়েশন, ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনিদেনর জন্য ছিল পৃথিবীর শেষ কলোনিয়াল আগ্রাশনের বিরুদ্ধে মৃত্যু হাতে দাড়ানো,আমরা বিদ্রোহ আর লড়াই করি তাই আমরা টিকি আছি- এই কথা জানাই দেয়ার দাওয়াত।
৭ আক্টোবরের পর যে হামাস নিধনের নামে জিম্মিমুক্তির নামে কোলেটারার ডেমেজ শব্দবন্ধের বাহানায় ইসরায়ের যে আক্রমণ তান্ডব পুরা গাজা জুড়ে পরিচালিত করছে ইতিহাসে এরকম বোমাবর্ষণ গণহত্যা সকল বাড়িঘর স্থাপনা স্কুলবিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল সব মাটির সাথে মিশাই দিছে। বিদ্যুৎ পানি গ্যাস খাবার সংকট সৃষ্টি করি পুরা গাজাবাসীকে এথনিংক্লিনজিং চালাই ফিলিস্তিনিদের নির্বংশ ভূমিচ্যুত করার আয়োজন করছে। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মানুষ যুদ্ধ ইউটিউবে ফেইসবুকে স্বচোখে দেখতেছে কে ন্যায্য কে অন্যয্য অমানবিক সারা পৃথিবীজুড়ে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা নিয়া এত আওয়াজ আর উঠে নাই। সারা পৃথিবীর সব দেশ এক দিকে আর ইসরায়েল ক্রিশ্চিয়ান জায়োনিস্ট-ইহুদি লোবির আমেরিকা গুটিকয়েক ইউরোপোর দেশ আর ভারত একদিকে।


গণহত্যাকারী ইসরায়েল নিজের ভিতর হইতে ডানপন্থী সমর্থনকারীদের পতন ঘটাইতে পারলে ইসরায়েলকে আপাতত দমানো যাইত। দুর্নীতিবাজ ও যুদ্ধবাজ গণহত্যাকারী নেতানিয়াহু ও তার প্রশাসন সেই সুযোগ জনগণকে দিবে না।


ইসরায়েলি হামলার ১০০ দিনের দিন রয়টার্স ও আল-জাজিরার সংবাদের বরাতে পত্রিকায় লিখা হইছে। এই ভাবে ফিলিস্তিনের গাজায় একটি বাড়ির ধংসস্তূপের ভেতরে কী যেন হাতড়ে বেড়াচ্ছেন আবু আওয়েইদা। বললেন, ‘আমি এখানে প্রতিদিন আসি। তাঁদের খুঁজি।’ ধ্বংসস্তূপের নিচে আবু আওয়েইদা খোজেন তার পরিবারের তিন শিশুকে। এখানে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ২২ স্বজনকে হারিয়েছেন তিনি। গতকাল রোববার ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের ১০০তম দিনেও গাজায় নির্বিচার হামলা চালানো হয়। এই উপত্যকায় মানুষ এখন স্বজন হারানোর বেদনার সঙ্গে নিজের প্রাণ বাঁচানো নিয়ে দুঃস্বপ্নের সময় পার করছেন। উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন ২৩ হাজার ৯৬৮ ফিলিস্তিনি। আহত ৬০ হাজার ৫৮২ জন। তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফামের তথ্যমতে, গাজায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫০ জন নিহত হচ্ছেন।সংঘাতের এই পর্যায়ে এসে গাজার এক বাসিন্দার বক্তব্য, ‘আমি মনে করি, এটা বিশ্ব সৃষ্টির পর মানুষের জন্য সবচেয়ে কঠিন ১০০দিন। পাঁচ সন্তানকে নিয়ে আমি গাজা নগরী থেকে রাফায় পালিয়ে এসেছি। সবচেয়ে ছোট সন্তানের বয়স মাত্র ২ বছর। এখন জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ জিনিসই পাচ্ছি না।’

২.
ইসরায়েল ভিকটিম হুডের ফাদে ফালাই গত ৭৫ বছর ধরি অগণন ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে। এবার গাজারে চূড়ান্ত এথনিং ক্লিনজিং করি গাজা হবে আমেরিকার বিলাসী সামুদ্রিক রিসোর্ট সেন্টার। আমেরিকার আসল চেহারা বাহির হইল। ‘টু স্টেট সলুশন’ মূলত পৃথিবীরে আশার ভিতর রাখি ধীরে ধীরে ধ্বংস ও গণহত্যার মধ্য দিয়া ফিলিস্তিনের ভূমিদখল ছিল মূল উদ্দেশ্য। ফিলিস্তিনের মালিক হইবে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা আর ইসরায়েল যেইখানে ফিলিস্তিন হইবে মাইনাস। এর পরের দৃশ্য হইবে গ্রেটার ইসরায়েল ম্যাপ মোতাবেক পার্শ্ববর্তী দেশগুলা আস্তে আস্তে দখল।
বন্দীমুক্তির বাহানায় নতুন করি যুদ্ধ বিরতিতে রাজি ন ইসরায়েল। গভীর রাতে ঘুমন্ত ফিলিস্তিনিগো উপর বিমান হামলার ফলে নারীশিশুসহ ৪৫০ নিহত হইছে, ১০০০ এর উপর মানুষ আহত হইছে। আর এ হামলায় পার্শ্ববর্তী নির্বীর্য আরবদেশগুলি তাদের আকাশ পথ ব্যবহার করতে দিয়া এ গণহত্যার সহযোগী কুলাঙ্গার হই উঠলো ইতিহাসে। এ যাবত প্রতিটি যুদ্ধ বিরতি কোনোভাবেই অস্ত্রবিরতি আছিল না। এ বারের যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইসরায়েল ১৫০জন ফিলিস্তিনি ও পশ্চিম তীরে বহু হত্যা ও বাড়িঘরসহ নানা স্থাপনা গুড়াই দিছে।
গাজায় ৫২৯দিন ধরি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের ছবি ডকুমেন্ট আর্কাইভ হই রইল। অনাগত সভ্য পৃথিবী আগ্রহ থাকলে একদিন পড়বে ও লিখবে হয়ত আক্ষেপও করবে ।


আমেরিকার প্রশাসনের সর্বত্রই জায়োনিস্ট ইসরায়েলের সমর্থক ইহুদি ব্যবসায়ী আত্মারা বসি আছে। আমেরিকার প্রধান দুইটি দলই ভোটের ফান্ড মূলত জায়োনিস্ট হইুদিরাই যোগায় ।


ফিলিস্তিনি বন্দীদের সহিত যে নির্যাতন করা হইছে তা নজিরবিহীন। কারাগারে ফিলিস্তিনি পুরুষ/নারীদের জন্মনিরোধ ইনজেকশন পর্যন্ত দেয়া হইছে। আর এই সব নারকীয়তা পাশবিকতা সুপরিকল্পিতভাবেই করা হইতেছে। সেটেলার কলোনিয়ালইজম যে এই তথ্য প্রযুক্তির রঙ-চঙা পৃথিবীর রক্তভেজা একটা পৃথিবীর দিকে রওনা দিছে তা অনেকেই অগ্রিম টের পাইতেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে জায়োনিস্ট-ক্রিশ্চিয়ান যৌথভাবে পরিচালিত ক্রশেড ইসলামিক সভ্যতাকে ধ্বংস করি দিতে চায় এ আর গোপন কিছু ন। মধ্য্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদ আহরণ ও তাদেরে সমরাস্ত্র বিক্রির বাজার হিসাবেই দেখতেছে আমেরিকা। দিন দিন মধ্যপ্রাচ্যরে রাজনৈতিকভাবে পঙ্গু ও পরনির্ভশীল করি তুলতেছে। সামরিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যরে মাথা তুলতে দিবে না কোনোদিন। সুন্নি ও শিয়ার ডিভাইড এন্ড রুল নীতি তারা ধরি রাখবে মোক্ষম অস্ত্র হিসাবে।
আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য নীতি মধ্যপ্রাচ্যরে জখম ও ধ্বংসের মন্ত্রে উজ্জীবিত। আমেরিকান বেইসগুলিতে সৈন্য ও সমরাস্ত্র বৃদ্ধি তারই নমুনা।
ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে ক্ষুব্ধ হই সম্প্রতি ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির জোট ইসরায়েলের গাজার গণহত্যারে নিন্দা জানানো শুরু করছে । কিন্তু আমেরিকার একক আগ্রাসী সিদ্ধান্তের মুখে ইউরোপও যেন অক্ষম। ট্রাম্প প্রশাসন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনি ও ফিলিস্তিনি সমর্থনে ছাত্রদেরকে গ্রেফতার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি থাকি ফিলিস্তিনিগোরে বরখাস্ত করতেছে। তথা কথিত হিউম্যান রাইটস ও বাক স্বাধীনতার সুতিকাগার আমেরিকা সাম্রাজ্যবাদী নীতি হইতে বাহির হইতে পারবে না। নিও লিবারেলও আর তারা থাকতেছে না ।
আমেরিকার প্রশাসনের সর্বত্রই জায়োনিস্ট ইসরায়েলের সমর্থক ইহুদি ব্যবসায়ী আত্মারা বসি আছে। আমেরিকার প্রধান দুইটি দলই ভোটের ফান্ড মূলত জায়োনিস্ট হইুদিরাই যোগায় । ফলে জায়োনিস্ট-ক্রিশ্চিয়ান বলয়ের শক্তিই আমেরিকার নিউক্লিয়াস দখল করি আছে। গণহত্যাকারী ইসরায়েল নিজের ভিতর হইতে ডানপন্থী সমর্থনকারীদের পতন ঘটাইতে পারলে ইসরায়েলকে আপাতত দমানো যাইত। দুর্নীতিবাজ ও যুদ্ধবাজ গণহত্যাকারী নেতানিয়াহু ও তার প্রশাসন সেই সুযোগ জনগণকে দিবে না। মানুষকে যুদ্ধের পক্ষে বয়ান খাওয়ানোই তার আত্মরক্ষার একটা কবজ।
ফিলিস্তিনিদের দমন ও দখলদারিত্ব, মানবিক সংকট ও যুদ্ধাপরাধ, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ ও আন্তর্জাতিক সমর্থন শান্তির সম্ভাবনা ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ ইত্যাদি নিয়ে কয়দিন আগেও বুদ্ধিজীবীরা কথা কইতেন। এখন আলাপ হয় ফিলিস্তিনিরা আর কয়দিন পৃথিবীতে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারবে?
পৃথিবীতে হয়ত ফিলিস্তিনিরা চূড়ান্ত রিফিউজি হবে, একদিন ফিলিস্তিন ফিলিস্তিনিদেরই হইবে। জায়োনিস্ট ইহুদিরা পুজির পুজ হই ইতিহাস হইতে নিশ্চিহ্ন হবে। এইটুকইু কিছু স্বপ্নবাজ বিপ্লবীদের আশা।

 

ফিলিস্তিনিদের চাবি

সরোজ মোস্তফা

চাঁদকেও গিলে ফেলবে
একেকটা মিশাইল।
কেউ না বাঁচলেও
দখলবাজরা বাঁচবে। ইতিহাসের গাছ লাগাবে।

কেউ বাঁচবে না।
না-পিতা, না-মাতা, ভাই-ভগ্নি
কাউকেই বাঁচতে দিবে না ভূমিদস্য, জল্লাদের মিসাইল।

ঋতুর পরে ঋতুতে জলপাই গাছ
মজলুমের কান্নার মতো আখ্যান শোনাবে।
শিশুদের আলতা পায়ের ছোট ছোট হাসি
গাজার মাটিতে তখনো আতঙ্কে দৌঁড়াতে থাকবে।
আল্লাহর দরবারে রক্তাক্ত চেহারায় শামিল হয়ে
চিৎকার করবে ‘ইয়া মাবুদ!’ ‘ইয়া আল্লাহ!’
তাদের পকেটে থাকবে বাড়িতে ফেরার
বাপ-দাদার চাবি।

এক/
বাপ-দাদার চাবিকে, ভূমিকে রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছে ফিলিস্তিনিরা। তাদের পাশে কেউ নেই। মহারাষ্ট্রগুলো, দানবচেয়ারগুলো তাঁদের পিতাকে মেরেছে, দাদাকে মেরেছে। এখন সন্তান শিশুদেরকেও মারছে। কাউকেই বাঁচতে দেবে না ওরা। সব ভূমি দখল করে নেবে। কিন্তু কোথায় যাবে ওরা? কে দিবে আশ্রয়? সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্তে হাজার বছরের ভূমিকে কেন ছেড়ে দিবে তারা? অনেকে বলেন : এটা একটা ভুল পদ্ধতি। এটা মেনে নেয়া যায় না। এটা একটা ভুল ম্যাসেজ। বন্দুকের বিরুদ্ধে, মিশাইলের বিরুদ্ধে ইজরায়েলি বোমার সামনে পাথর তুলে প্রতিরোধ করা যায় না। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে, বেঘোরে মারা পড়ার কোন মানে হয় না। অথচ শিশুরা ফুল। ফুলের যত্ন নিতে হয়। এইভাবে শিশু মৃত্যুকে সহ্য করা যায় না। এইভাবে মৃত্যু কুপে শিশুদের ঠেলে দেওয়ার কোন মানে হতে পারে না। শিশু মৃত্যুর ভেতর দিয়ে দেশকে রক্ষা করা যাবে না। জন্মের প্রারম্ভে যদি শিশুকে প্রশ্ন করা হতো — তুমি অবরুদ্ধ গাজায় জন্মাইতে চাও কি-না? সে নিশ্চয়ই রাজি হতো না। এমন একটা হত্যাযজ্ঞে কে জন্মাতে চাইবে? এই জন্মের পিছনে তার হাত নেই। এই জাতীয়তাবাদ রক্ষার ঝুঁকিতেও তার সম্মতি নেই। শিশুরা হাসিতে-খুশিতে বেঁচে থাকতে চায়। আনন্দ ও শান্তি চায়। এই রক্তাক্ত জনপদে শিশুরা কেন জন্মাবে? যেখানে তার মনের সম্মতি নেই, সেখানে এভাবে বোমার আঘাতে মারা যাওয়ার কোন মানে নেই।

অনেকেই আরো বলেন : ফিলিস্তিনিরা দেশ ছেড়ে অন্য ভূমিতে চলে যাক। ইজরায়েলকে দিয়ে দিক পৈত্রিক ভূখণ্ড। সম্মানিত সাম্রাজ্যবাদী ট্রাম্প গাজায় ব্যবসা চালাক। প্রভুতের স্বপ্নই বাস্তবায়িত হোক। একটা শিশুও যেন আর না মরে। নিরাপরাধী মানুষ যেন স্বস্তিতে থাকে। জীবনের চেয়ে আর দামি কি কিছু হতে পারে? এই কথাগুলো কতোটা সত্য, আর কতোটা মান্যযোগ্য। বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিনিরা পিতার মাটিকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে। পৈত্রিক ভূমিকে কে ছাড়তে চায়? সারা পৃথিবী চক্রান্ত করলেও একটা ফিলিস্তিনি যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন এই মাটিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচবে। স্বপ্ন দেখবে একদিন ঘরে ফিরবে তারা। এই জন্য প্রত্যেকেই তাদের বুকপকেটে যত্ন করে রেখেছে ঘরে ফেরার চাবি।

দুই/
ফিলিস্তিনিদের এই স্বপ্ন ও লড়াই পাশ্চাত্যকে কিংবা মুসলিম দেশগুলোকে স্পর্শ করেনি। ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্বের এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটাকে আরবরা বুঝছে না কেন? কারন তারা ফিলিস্তিনি ইস্যুটাকে জাতীয়তাবাদের পয়েন্ট থেকে ডিল করছে। এইজন্য শিশু হত্যায়, নারী হত্যায়, মানুষ হত্যায় নির্বাক তারা। সমস্ত ফিলিস্তিনি শিশু মারা যাবে। সব ফিলিস্তিনি নারী মারা যাবে। প্রতিদিনই মৃত্যু ও ধ্বংসের মুখোমুখি হচ্ছেন গাজার সাধারণ মানুষ। গাজাবাসীরা প্রতিদিনই বিশ্বের কাছে আবেদন রেখে বলে, আমরা শুধু বাঁচতে চাই। আমাদের শিশুদের জন্য একটি ভবিষ্যৎ চাই। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনছে না। মনে হয় কেউ শুনবেও না।


ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়নি এবং তাদের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।


কিংবা শোনার আগে সবাইকে মেরে সাফ করে ফেলবে ইসরাইলবাহিনি। গাজা কার্যক্রমের মানবিক সহায়তা পরিচালক রাচেল কামিংস সেভ দ্য চিলড্রেনকে বলেছে: ‘বোমা পড়ছে, হাসপাতাল ধ্বংস হচ্ছে, শিশুরা মারা যাচ্ছে—আর বিশ্ব নীরব। কোনও সাহায্য নেই, নিরাপত্তা নেই, ভবিষ্যৎ নেই।’ গত দেড় বছর ধরে দেখা যাচ্ছে — ইসরায়েল ধ্বংসযজ্ঞসহ গণহত্যা চালিয়েও পার পেয়ে গেছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার ৯০০’র বেশি শিশু নিহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের যুদ্ধ পুনরায় শুরু হওয়ার পর এক সপ্তাহে ৭৯২ জন নিহত ও ১ হাজার ৬৬৩ জন আহত হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ১৪৪ জনে, আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৩ হাজার ৭০৪ জন। গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। বেশিরভাগ হাসপাতাল জ্বালানি ও ওষুধের অভাবে কাজ করতে পারছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করেছে, সংঘাতের কারণে শিশু ও নারীদের স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গত সপ্তাহে বলেছিলেন, গাজায় ‘মানবিক বিপর্যয়’ চলছে এবং যুদ্ধবিরতি ছাড়া এ সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। কিন্তু ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়নি এবং তাদের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।

তিন /
রক্তাক্ত ফিলিস্তিনিদের দেখে প্রতিটি মানবিক মানুষের রক্তক্ষরণ হয়। কিন্তু আরবীয়রা চুপ করে থাকে। যেখানে মুসলিমরা নিজেদের ভাই মনে করে এক হয়ে যেতে চায়, সেখানে আরবীয়রা জাতীয়তাবাদের কন্সেপ্টকে সামনে রেখে শাসকদের সাথে মিশে থাকতে চায়। গুলো। যার জন্যে অনেক কিছু করার স্কপ থাকা স্বত্তেও এরা বারং বার নিজেদের ইনক্যাপাবিলিটিস দেখিয়ে যাচ্ছে।
অথচ ঐতিহ্য ও আকিদার জায়গা থেকে ফিলিস্তিন ভূমিটি অনেক সিগনিফিকেন্ট। পবিত্র এই ভূমিকে রক্ষা করার দায়িত্বও মুসলিমদের। কাজেইএই মুসলিমদের থেকেই কারও না কারও এগিয়ে যেতে হবে।

ফিলিস্তিন মূলত মুসলমানদের পবিত্র ভূমি। হাদিসে আছে, ‘কাবা শরিফ তথা মসজিদুল হারামে নামাজে এক লাখ গুণ সওয়াব, মদিনা শরিফে মসজিদে নববীতে নামাজে ৫০ হাজার গুণ সওয়াব, বাইতুল মুকাদ্দাসে নামাজে ২৫ হাজার গুণ সওয়াব (ইবনে মাজাহ)।’ যুগে যুগে এই পবিত্র ভূমিতে অসংখ্য নবী-রাসুলের আবির্ভাব ঘটেছে। এই ভূমিতে অনেক নবীর স্মৃতি ও সমাধি রয়েছে। বলা যায়, গাজা হচ্ছে ইসলামি সংস্কৃতির চারণভূমি। সময় এবং রাজনৈতিক ভাঙ্গা গড়ায় পবিত্র এই ভূমি ইহুদিদের দখলে।

চার/

৬৪৮ সালে হজরত উমর (রা.)-এর খেলাফতকালে মুসলমানরা ফিলিস্তিন জয় করেন। ১০৯৬ সালে এই ভূমি আবারও খ্রিস্টানদের দখলে আসে। ১১৮৭ সালে সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী আবার জেরুজালেম শহর জয় করেন। এরপর থেকেই ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চলতে থাকে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ইহুদিরা তৎকালীন তুরস্কের শাসক সুলতান আবদুল হামিদের কাছে ফিলিস্তিনে বসতির অনুমতি চায়; সুলতান অনুমতি দেননি। ১৯১৭ সালে ইংরেজরা ফিলিস্তিনে প্রবেশ করে ১৯২০ সালে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। ইংরেজদের উদ্যোগেই ইহুদিরা ফিলিস্তিনে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। সাম্রাজ্যবাদীদের মত ধীরে ধীরে ইহুদীরা ভূমি কিনতে থাকে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের তৎপরতায় ১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে জায়নবাদী অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৭ সালে ইসরাইল ‘মসজিদুল আকসা’ দখল করে। এরপর থেকে ক্রমশ মুসলমানদের প্রতি ইহুদিদের জুলুম-নির্যাতন ও অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়তে থাকে, যা আজও চলছে।


ইহুদি-ক্রিশ্চান-মুসলমান — তিনটি ধর্মের পবিত্রভূমি জেরুজালেম। কিন্তু মানুষের চেয়ে ধর্ম কি বড়? মানুষ কিংবা শিশু হত্যা করে ধর্ম কি প্রতিষ্ঠা সম্ভব?


পবিত্র কোরআন ও হাদিসে ফিলিস্তিনের অসংখ্য স্থানের বর্ণনা আছে। ফিলিস্তিনি ভূমির পবিত্রতা রক্ষা করা মুসলমানদের দায়িত্ব। প্রতিটি মুসলিম বিশ্বাস করে জেরুজালেম হলো ইসরা বা রাসুলুল্লাহর (সা.) রাত্রিকালীন ভ্রমণের সর্বশেষ জমিন। এখানে তিনি সকল নবীর নামাজের ইমামতি করেন। তার পর তিনি এখান থেকে ঊর্ধ্ব আকাশে ভ্রমণ করেন।

পাঁচ /
ইহুদি-ক্রিশ্চান-মুসলমান — তিনটি ধর্মের পবিত্রভূমি জেরুজালেম। কিন্তু মানুষের চেয়ে ধর্ম কি বড়? মানুষ কিংবা শিশু হত্যা করে ধর্ম কি প্রতিষ্ঠা সম্ভব? যদি মানুষই না-থাকে তবে তীর্থস্থান দিয়ে কি হবে? আগে মানুষ বাঁচুক। মানুষের ঘরবাড়ি বাঁচুক। মানুষের ঠিকানা রক্ষা পাক। ফিলিস্তিনিরা কোনভাবেই তাদের পৈতৃক ভূমিকে ইজরায়েলের কাছে তুলে দিতে পারে না। তাই তারা জীবন দিচ্ছে। শিশুরাও বুলেটের সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা শুধু পিতার ভূমিকা রক্ষা করতে চাচ্ছে। বুক পকেটে বহন করছে শত জনমের, হাজার বছরের পৈত্রিক চাবি।

আমার শৈশব, বিটিভির ফিলিস্তিন সংবাদ ও আজকের বাস্তবতা

ফেরদৌস মাহমুদ

আমার শৈশবকাল একটিই চ্যানেল— বিটিভির আলো-আঁধারিতে বাঁধা ছিল। বাংলাদেশ টেলিভিশনের সেই একমাত্র চ্যানেলটি ছিল ঘরের ভিতরে বাইরে পৃথিবীর দরজা। সন্ধ্যা নামলে আমরা পর্দার সামনে বসতাম: বাবা খবর শুনতেন, আর আমি চুপচাপ চেয়ে থাকতাম, বুঝতাম না, তবু দেখতাম।
সেই সময় রাত আটটার বাংলা সংবাদের শিরোনামগুলোতে উচ্চারিত হতো ‘আন্তর্জাতিক সংবাদ’। নামটি বলার সঙ্গে সঙ্গেই পর্দায় ভেসে উঠত আরব শিশুর চোখ, যার পেছনে ধ্বংসস্তূপ। কেউ হয়ত বলতেন, ‘ফিলিস্তিন’—কিন্তু আমি জানতাম না এ শব্দের মানে কী।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের সময় প্রায় ৭৫০,০০০ ফিলিস্তিনিকে তাদের জন্মভূমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়, যার ঘটনাটি ফিলিস্তিনিরা ‘নাকবা’ (বিপর্যয়) নামে স্মরণ করে। তখন প্রায় ৫০০ গ্রাম ও শহর ধ্বংস করে দেওয়া হয়, এবং তাদের নাম পরিবর্তন করে হিব্রু নাম দেওয়া হয় ।
উল্লেখ্য ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক বিরোধগুলোর একটি। এই সংঘাতের মধ্যে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর যেভাবে ধারাবাহিকভাবে দমন-পীড়ন, নিপীড়ন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন চালানো হচ্ছে, তাকে এক কথায় ‘ইসরাইলি বর্বরতা’ বলেই চিহ্নিত করা যায়। এটি কেবল একটি দখলদার রাষ্ট্রের আগ্রাসন নয়, বরং একটি জাতিগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দেওয়ার সুপরিকল্পিত রাষ্ট্রীয় প্রকল্প। ইসরায়েলি ইতিহাসবিদ Ilan Pappé তার বই The Ethnic Cleansing of Palestine এ একে ‘জাতিগত নির্মূল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ।
১৯৮০–৯০-এর দশকে বাংলাদেশে ‘ফিলিস্তিন’ শব্দটি ছিল একধরনের নৈতিক সহমর্মিতার প্রতীক। রাস্তায়-রাস্তায় ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ লেখা পোস্টার, কিছু নাগরিক সমাজের ক্ষীণ প্রতিবাদ, আর ইসলামি ভাবধারার দলগুলোর সরব অবস্থান—এই ছিল তখনকার প্রেক্ষাপট। রাষ্ট্রীয়ভাবে কখনো জোরালো অবস্থান না থাকলেও সাধারণ মানুষের হৃদয়ে ফিলিস্তিন ছিল এক দূরের আপনজনের মতো, যার কষ্টকে আমরা আপন করে নিতাম টেলিভিশনের সাদাকালো আলোয়।


শান্তির সম্ভাবনা ও প্রতিরোধের শক্তি—দুইয়ের ভারই বহন করতেন তিনি, যেটি ফিলিস্তিনের সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ইয়াসির আরাফাত সশস্ত্র যুদ্ধের পথ থেকে সরে গিয়েছিলেন, তিনি শান্তিপূর্ণ পথে সমাধান চেয়েছিলেন।


ফিলিস্তিন তখন আমার কাছে ছিল সাদাকালো এক শোকগাথা। একটা রাস্তার ধারে কাঁদছে এক নারী, শিশুরা পাথর ছুঁড়ছে, ট্যাংক এগিয়ে আসছে ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে। আমি বুঝতাম না—কিন্তু চোখ ফিরাতে পারতাম না। আমি তখন ভাবতাম, ওই ছেলেটা, যে পাথর ছুঁড়ছে, সে কি আমার মতো স্কুলে যায়? দুপুরে ভাত খায়? অবাক হতাম এটা ভেবে— ওরা প্রতিদিন যুদ্ধ করে।
শৈশবেই আমার ছোট্ট পৃথিবীতে কয়েকটি শব্দ এসে ঢুকে পড়েছিল—‘ইন্তিফাদা’, ‘আত্মঘাতী হামলা’, ‘ইসরায়েলি আগ্রাসন’। এসবের মানে বুঝতাম না, কিন্তু শব্দগুলো ছিল যেন কোনো জাদুবাক্য, যেগুলো শুনলেই আমার বুক কেঁপে উঠত। পরিচিত কেউ বলেছিল, ‘ওরা মুসলমান, তাই মরে।’— সেই কথার ভেতরেও একটি ভয়াবহ জিজ্ঞাসা ছিল। আমি প্রশ্ন করতাম, ‘তাহলে কি আমরা সুরক্ষিত?’ উত্তর মিলত না। বরং বিটিভির সাদাকালো ছবি আমার প্রশ্নকেই আরও ঘন করত।

বিটিভি আমাদের শিখিয়েছিল কিভাবে দুঃখকেও সংবাদে পরিণত করা যায়। কিন্তু শিশুদের চোখে খবর থাকে না—থাকে অনুভব। আমার অনুভবে ‘ফিলিস্তিন’ এক শোকের নাম, এক প্রতিবাদের প্রতীক। আমার মনে হতো, খবর নয়, যেন কারো কবিতা পড়ছি আমি, যার প্রতিটি শব্দে রক্ত আর কান্নার ধ্বনি।
ওই সময় ফিলিস্তিনের প্রয়াত নেতা পিএলও প্রধান ইয়াসির আরাফাত বিশ্বব্যাপী খুব জনপ্রিয় ছিলেন। বিটিভির সংবাদে নিয়মিতই দেখা যেত তার চেহারা। তিনি ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন— ‘I have come bearing an olive branch and a freedom fighter’s gun. Do not let the olive branch fall from my hand.’ অর্থাৎ ‘আজ আমি এখানে এসেছি এক হাতে যোদ্ধার বন্দুক, আর অন্য হাতে একটি মুক্তির অলিভ শাখা নিয়ে। এই শাখাটি কখনো নিচে পড়তে দেবেন না।’ তার এই বাক্য তখন যেন প্রতিধ্বনিত হয়েছিল গাজার প্রতিটি ধ্বংসস্তূপের ভেতর। শান্তির সম্ভাবনা ও প্রতিরোধের শক্তি—দুইয়ের ভারই বহন করতেন তিনি, যেটি ফিলিস্তিনের সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ইয়াসির আরাফাত সশস্ত্র যুদ্ধের পথ থেকে সরে গিয়েছিলেন, তিনি শান্তিপূর্ণ পথে সমাধান চেয়েছিলেন। আর তখনেই তার নেতৃত্ব নিয়ে ফিলিস্তিনবাসীদের মধ্যে তৈরি হয়েছিল দ্বিধাবিভক্তি। গাজায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল পিএলও বিরোধী সংগঠন হামাস।
এখন যখন দেখি গাজার শিশুরা ক্ষুধার্ত, মায়েরা সন্তান হারিয়ে নিস্তব্ধ, তখন সেই শৈশবের রাতের বিটিভি চোখে ভাসে। মনে হয়, তখনো তারা মরছিল, আজও মরছে—শুধু আমরা বড় হয়ে গেছি, তারা মুক্ত হয়নি। আমার শৈশব, বিটিভি ও ফিলিস্তিন সংবাদ—তিনটি শব্দ নয়, তিনটি সময়। আমার বেড়ে ওঠা, রাষ্ট্রীয় পর্দা ও একটি জাতির কান্না। এই ত্রয়ী স্মৃতির ভিতরে আমি দেখেছি—একটি প্রশ্ন কীভাবে জন্ম নেয়, কীভাবে একটি কান্না আন্তর্জাতিক হয়, কীভাবে খবর হয়ে ওঠে আত্মজৈবনিক প্রতিচ্ছবি। ফিলিস্তিন এখন আর পরদেশ নয়—সে আমার শৈশবের সঙ্গী, বিবেকের এক দীর্ঘ প্রতিধ্বনি। যখনই শিশুরা কাঁদে, আমি শুনি তাদের কণ্ঠে আমার শৈশবের গান।
২.
২০২৫ সালের শুরু থেকে গাজা উপতক্যায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার সংঘাত নতুন মাত্রা লাভ করেছে। বলা যায়, গাজা আজকের পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট ও রাজনৈতিক জটিলতার কেন্দ্রবিন্দু। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হলেও, বাস্তবে গাজা রয়ে গেছে একটি অবরুদ্ধ জনপদ, যেখানে প্রতিদিন মানুষ মরছে, শিশু অনাহারে কাতরাচ্ছে, এবং মানবতা বারবার পরাজিত হচ্ছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েল নতুন করে গাজায় বোমা বর্ষণ শুরু করে। শুধু এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই ৩২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, বর্তমানে গাজায় ১০ লাখেরও বেশি শিশু জরুরি মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত। একটি সময়ের জীবনমুখী নগর এখন পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে, যেখানে হাসপাতাল নেই, ওষুধ নেই, পানীয় জল নেই—আছে শুধু শোক, ক্ষোভ আর প্রতিরোধের এক প্রগাঢ় আর্তি।
গাজার রাজনীতির প্রধান শক্তি হামাস, যার সামরিক শাখার কার্যক্রম ইসরায়েল বরাবরই ‘সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে বর্ণনা করে। অন্যদিকে হামাস নিজেদের ‘প্রতিরোধ আন্দোলন’ হিসেবে দাবি করে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে গাজার অভ্যন্তরেই হামাসের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। সাধারণ জনগণ দাবি তোলে—
১. গাজা যেন আর যুদ্ধক্ষেত্র না হয়
২. বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক
৩. রাজনৈতিক বিকল্প খোঁজা হোক
এই বিক্ষোভ দমন করতে হামাস কঠোর অবস্থান নেয়—কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, অনেককে গোপনে আটক রাখা হয়। এটি দেখায়, হামাস কেবল ইসরায়েল নয়, বরং নিজের জনগণের বিরুদ্ধেও এক ধরণের কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় কিছু দেশ ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ সমর্থন করলেও, মানবিক বিপর্যয় সামনে আসতেই সমালোচনার মুখে পড়ে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যেখানে গাজার যুদ্ধ এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই দ্বৈত চরিত্র আন্তর্জাতিক রাজনীতির দ্বিধা ও পক্ষপাতের প্রতিচ্ছবি।
এদিকে আরব রাষ্ট্রগুলো নতুন শান্তি পরিকল্পনার আহ্বান জানিয়েছে, তবে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। চীন, রাশিয়া ও তুরস্ক অপেক্ষাকৃত কড়া ভাষায় ইসরায়েলের সমালোচনা করলেও তাদের ভূমিকা মূলত বক্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
বিশ্লেষকরা বলছেন— গাজার পুনর্গঠন না হলে, নতুন প্রজন্ম কেবল ধ্বংস আর হতাশা নিয়ে বড় হবে। হামাসকে একমাত্র শত্রু হিসেবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধান খোঁজাই দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার উপায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এটি এখন একটি নৈতিক পরীক্ষার ক্ষেত্র—তারা কীভাবে মানবতা, ন্যায়বিচার এবং শান্তির পক্ষে দাঁড়ায়, সেটিই সময় বলে দেবে।
গাজা আজ শুধু একটি ভৌগোলিক সংকট নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক নৈতিকতার সংকটও বটে। এখানে প্রতিদিন যে শিশুরা নিহত হচ্ছে, তাদের মৃত্যুর দায় কেবল ইসরায়েল কিংবা হামাসের নয়—এই দায় পুরো বিশ্বের বিবেকের। মানবতা যখন আহত, তখন নিরপেক্ষ থাকা আর পক্ষপাতিত্বের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। গাজার মুক্তি মানে শুধু একটি ভূখণ্ডের স্বাধীনতা নয়—মানবজাতির আত্মমর্যাদা ও সহানুভূতির পুনর্জাগরণ।
মনে পড়ে ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি মাহমুদ দরবিশ-এর কথাগুলো, যিনি গাজার যন্ত্রণাকে রূপ দিয়েছেন কবিতায়:

বেঁচে থাকি না বাঁচার জন্য
বরং মৃত্যুর সাক্ষী হয়ে।
যখন আকাশে যুদ্ধবিমান উড়ে
তখন আমরা রুটি খাই প্রিয়তমার পাশে।
আমরা গাজার লোকেরা,
বিষাদের মধ্যেও গান গাই।

এই কবিতার প্রতিটি শব্দ যেন গাজার বন্দিদশা, দুর্ভোগ আর সাহসিকতার দলিল হয়ে ওঠে। মানবিক বিপর্যয়ের মাঝেও তাদের জীবনের প্রতি যে অসম্ভব ভালোবাসা—তা বিশ্ব বিবেককে প্রশ্ন তোলে: কতকাল এভাবে একটি জাতিকে দমিয়ে রাখা যাবে?

আমরা যারা দূর দেশ থেকে এই ঘটনা দেখি, খবর পড়ি, কান্না অনুভব করি—আমরাও দায় এড়াতে পারি না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতা ছড়ানো, মানবিক সহায়তা সংস্থায় অবদান রাখা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনার জায়গা তৈরি করা—এমন বহু পথ আছে, যার মাধ্যমে আমরা ‘নীরব দর্শক’ না থেকে সক্রিয় মানবিক কণ্ঠ হতে পারি।

আমার শৈশবের সেই ফিলিস্তিনি শিশুদের চোখ আজও আমার মনে পড়ে। আজ যখন গাজার শিশুরা কান্না করে, আমি অনুভব করি—সেই কান্না আমার শৈশবকে, আমার বিবেককে নাড়া দেয়। আমরা সবাই মিলে যদি প্রশ্ন করতে শিখি, সহানুভূতির ভাষা খুঁজে পাই, তবে হয়তো একদিন মুক্তির গানও শুনতে পারব

বিশ্ববিবেক আপনি কোথায়?

কুশল ভৌমিক

ফিলিস্তিনের নিষ্পাপ নিরস্ত্র মানুষগুলো মরছে। বড় বড় ভবন রাস্তাঘাট হাসপাতাল আশ্রয়কেন্দ্রগুলো বোমার আঘাতে ধসে পড়ছে।অথচ আমি দেখতে পাচ্ছি বিশ্ব বিবেক মরে যাচ্ছে নয়তো অদ্ভুত কোনো কারণে বোবা ও বধির হয়ে যাচ্ছে।দেখতে পাচ্ছি অভিধানের পৃষ্ঠা ছাড়া আর কোথাও মানবতা শব্দটি নেই।নয়তো বিশ্বের পরাশক্তিগুলো এমন নিশ্চুপ প্রতিক্রিয়াহীন কেন? পরাশক্তির কথা বাদই দিলাম মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো কী ভূমিকা রাখছে? সুন্নী শিয়ার মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব কিংবা অর্থনৈতিক বানিজ্যিক স্বার্থই কি বর্তমান মানব ইতিহাসের শেষ কথা? ঈশ্বর আপনি কোথায়? কিন্তু আপনার সৃষ্টি জগতের শ্রেষ্ঠতম প্রাণী মানুষ গুলো কোথায় যাদের মনে নূন্যতম মানবতা এবং আপনার প্রতি ভয় আছে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না।

বস্তুত ইহুদিদের কোনো দেশ ছিল না।তারা ছড়িয়ে ছিল বিভিন্ন দেশে। ১৯ শতকে যখন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, তখন দেশহীন ইহুদিদের একটি দল স্বপ্ন দেখল নিজস্ব দেশের। সেই স্বপ্ন পূরণে অর্থদাতার ভূমিকা নিয়েছিল সে সময়ের অন্যতম ধনী রথসচাইল্ড পরিবার।


২০০০ সালে বিল ক্লিনটনের উদ্যোগে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি হয় কিন্তু তা ব্যর্থ হয়ে যায়। ২০০১ থেকে গাজা অবরোধ করে রেখেছে ইসরাইল।


খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে রোমানদের অত্যাচারে ইহুদিরা যখন ফিলিস্তিন ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়, রথসচাইল্ডের পূর্বপুরুষেরাও ছিল সেই দলে। এই জার্মান-ইহুদি পরিবার ১৮ শতকে ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক বনে যায়। এই পরিবারের অনেক সদস্য ইউরোপীয় দেশে পাড়ি জমিয়েছিল। কেউ কেউ সেখানে হয়ে উঠেছিল পুরোদস্তুর অভিজাত।

নিজস্ব দেশের স্বপ্ন দেখা ইহুদি জাতীয়তাবাদীরা (জায়োনিস্ট) ১৮৯৭ সালে সুইজারল্যান্ডের বাসেলে জড়ো হয়। তারা ফিলিস্তিনকে বানাতে চায় নিজের স্বদেশ। আর এজন্য সহায়তা চায় সে সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ ইংল্যান্ডের।এই ফিলিস্তিনকে ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তোরাহতে (তাওরাত) বলা হয়েছে তাদের ‘প্রতিশ্রুত ভূমি’। পূর্বপুরুষ আব্রাহাম ইরাক থেকে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন এই ফিলিস্তিনে। মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কোরআনের সূরা মায়েদায়ও এই ভূমির কথা আছে। নবী সোলায়মান (আ.) জিওন পাহাড়ে বায়তুল মাকদিস নামে যে প্রার্থনাগৃহ বানিয়েছিলেন, তা এই ভূমির জেরুজালেমেই।

এই ভূমিতে ফিলিস্তিনিরা কিন্তু বসবাস করছে সপ্তম শতাব্দী থেকেই। ১৯৪৭ সালে ইউরোপ-আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত জাতিসংঘ সেই ভূমিকে ভাগ করে ইহুদিদের জন্য ইসরাইল এবং আরবদের জন্য ফিলিস্তিন নামে দুটো পৃথক রাষ্ট্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিল। ইসরাইল ১৯৪৮ সালে মে মাসে স্বাধীনতা ঘোষণা করে, আরবরা তা প্রত্যাখ্যান করে। শুরু হয় যুদ্ধ, আর তা চলছে আজঅবধি। ইউরোপ-আমেরিকার মদদপুষ্ট ইসরাইল জাতিসংঘ নির্ধারিত নতুন ফিলিস্তিনের অনেক জায়গা দখল করে নেয়, জাতিসংঘ ১৯৪৭ সালে সীমান্তে ফেরত যেতে বললেও ইসরাইল তাতে অস্বীকৃতি জানায়। অন্তত সাত লাখ ফিলিস্তিনিকে ভিটেছাড়া হতে হয়। তারপর থেকে আরও অনেক যুদ্ধ ও ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হয়। এর মধ্যে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এসব যুদ্ধে ইসরাইল ফিলিস্তিনের আরও ভূমি দখল করে নিয়েছে, আরও ফিলিস্তিনিকে প্রতিবেশী আরব দেশগুলোয় পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে শরণার্থী শিবিরে, আর কখনও নিজ দেশে ফিরতে পারেনি। ১৯৫৮ সালে ইয়াসির আরাফাত ‘ফাত্তাহ’ সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনি মুক্তিসংগ্রাম শুরু করেন। আরব লীগের উদ্যোগে বিভিন্ন ফিলিস্তিনি সংগ্রামী সংগঠনের সমন্বয়ে ‘ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থা’ গঠিত হয় ১৯৬৪ সালে। এতে ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধ মুক্তি সংগ্রাম নতুন মাত্রা পায়। এভাবে ফিলিস্তিনিরা ‘ফিলিস্তিনি’ নামের একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। ১৯৮৭ সালে অধিকৃত ফিলিস্তিনে ফিলিস্তিনিরা প্রথম ইন্তিফাদা শুরু করেন। ইসরাইল ফিলিস্তিনি তরুণ ও কিশোররা পাথর হাতে তুলে নেয় ইসরাইলী কামান আর গোলাবারুদের সামনে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত স্থায়ী এই প্রথম ইন্তিফাদায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি হতাহত হয়, গ্রেফতার হয় অন্তত দশ হাজার। এই আন্দোলনের ফলে সারাবিশ্বে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে জনমত তৈরি হয়। ১৯৮৮ সালে পিএলও পক্ষে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন ইয়াসির আরাফাত। ১৯৯৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পিএলও ও ইসরাইলের মধ্যে অসলো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে পক্ষ দুটি পরস্পরের অস্তিত্ব স্বীকার করে নেয়। এর ফলে পশ্চিম তীরের অধিকাংশ এলাকা এবং গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের শাসন কায়েম হয়। কিন্তু ইসরাইলী হামলা ও বর্বরতা থেমে নেই। ২০০০ সালে বিল ক্লিনটনের উদ্যোগে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি হয় কিন্তু তা ব্যর্থ হয়ে যায়। ২০০১ থেকে গাজা অবরোধ করে রেখেছে ইসরাইল।

ওয়েস্ট ব্যাংক বা পশ্চিম তীর (৫,৯৭০ বর্গ কিলোমিটার) এবং গাজা ভূখন্ড (৩৬৫ বর্গ কিলোমিটার) হচ্ছে দুটি প্রধান ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত এলাকা। এই দুই ফিলিস্তিনি ভূখন্ডের সবচেয়ে নিকটবর্তী দুটি এলাকার মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার।

ওয়েস্ট ব্যাংক বা পশ্চিম তীরকে এই নামে ডাকা হয় কারণ এটি জর্দান নদী এবং ডেড সীর পশ্চিম তীরে। জেরুসালেম পর্যন্ত এর বিস্তার। যে জেরুসালেম নগরীকে কীনা ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলি- উভয়েই তাদের রাজধানী বলে দাবি করে।
পশ্চিম তীর নিয়ন্ত্রণ করে ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ফিলিস্তিনি সরকার। ধর্মনিরপেক্ষ ফিলিস্তিনি দল ফাতাহ এই ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের মূল শক্তি বা দল।আর গাজার সঙ্গে রয়েছে ইসরায়েলের ৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত। মিশরের সঙ্গেও গাজার ৭ কিলোমিটার সীমান্ত আছে। গাজার অন্যদিকে ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভূমধ্যসাগর উপকূল।গাজা নিয়ন্ত্রণ করে হামাস। ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থী দল হামাস। অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে হামাস তাকে স্বীকৃতি দেয় না।এই হামাসকে উৎখাতের জন্যই মূলত ইসরায়েলের এই বর্বর আক্রমণ।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে নেতানিয়াহু বাহিনীর বর্বর হামলায় গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৬৯৫ জনে।পৃথিবীর মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গাজা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা রোববার (৬ এপ্রিল) জানিয়েছে, গাজার পরিস্থিতি দিন দিন কঠিন হচ্ছে। সাংবাদিক হিন্দ খোদারি গাজার দের এল-বালাহ থেকে বলেছেন, “এখানে এখনো সকাল। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, ফিলিস্তিনিরা যে কোনো খাবারের সন্ধান করছে যেন তারা তাদের পরিবারকে খাওয়াতে পারে। গত এক মাস ধরে গাজায় একটি ট্রাকও প্রবেশ করেনি— কোনো খাবার না, বাণিজ্যিক কোনো কিছু না, কোনো জ্বালানি না, রান্নার কোনো গ্যাস না, এমনকি ওষুধও না। এমনকি কোনো তাঁবু বা আশ্রয় উপকরণও না।”এই সময়ের মধ্যে অঞ্চলটিতে ১৭ হাজারের বেশি শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। আর ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হত্যাকাণ্ডে অনাথ হয়েছে ৩৯ হাজারের বেশি শিশু।এই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ মদদদাতা অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের পক্ষে রয়েছে খুবই ক্ষমতাধর একটি লবি। সেখানে জনমতও ইসরায়েলের পক্ষে। এর ফলে কোন প্রেসিডেন্টের পক্ষে ইসরায়েলেও ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেয়া কঠিন।২০১৩ সালে বিবিসি ২২টি দেশে একটি জরিপ চালিয়েছিল। সেই জরিপে দেখা যায়, পুরো পশ্চিমা দুনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে একমাত্র দেশ, যেখানে জনমত ইসরায়েলের পক্ষে সহানুভূতিশীল।শুধু তাই নয়, এই দুইদেশ ঘনিষ্ঠ সামরিক মিত্র। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক সাহায্য পায় ইসরায়েল। এই সাহায্যের একটা বড় অংশই খরচ হয় ইসরায়েলের জন্য সামরিক অস্ত্র কেনার জন্য।

গুলি-বোমা-ক্ষুধা-নির্যাতন আর বিনা চিকিৎসায় অগুনতি মৃত্যু দেখতে অভ্যস্ত এ অঞ্চলের প্রখ্যাত কবি মুরিদ বারগুতি লিখেছিলেন—

‘নিরাশার কালে শুধু মনে রাখি—
মৃত্যুর পরও এক জীবন আছে;
ফলে কোনোই সমস্যা নেই আমার।
কিন্তু প্রশ্ন রাখি:
হে খোদা,
মৃত্যুর আগে কি কোনোই জীবন নেই?’

মুরিদ বারগুতির মতো তারই বন্ধু কিংবদন্তিতুল্য ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারবিশ লিখে যান, ‘আমার শোক মিছিলে সর্বদাই আমি আগাম হাজির: কে তবে মরে গেল… কে?’

দারবিশ আপনি জানেন না কে মরে গেছে?
মরে গেছে মানবিক মূল্যবোধ ,মরে গেছে বিশ্ববিবেক।

বেঁচে আছি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা দেখব বলে

উপল বড়ুয়া

পৃথিবীর অস্তিত্ব যতদিন আছে, মানুষের মধ্যে যুদ্ধ চলবেই। এর শেষ নেই তবে কমানো যাবে। আলবার্ট আইনস্টাইনের ‘যুদ্ধ কেন হয়’ লেখা চিঠির উত্তরে এমনটাই জানিয়েছিলেন মনোসমীক্ষণের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েড। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ভয়াবহতা নেই বটে তবে যুদ্ধ কি থেমে আছে দুনিয়ায়? ফিলিস্তিন, ইউক্রেন, সিরিয়া, ইয়েমেন—মানবসভ্যতা এত উন্নতির শিখরে পৌঁছার পরও এসব দেশ ভেসে যাচ্ছে রক্তে। সম্প্রতি যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরায়েল যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে গাজা উপত্যকায় সেটি দেখে মানুষ বিশ্বাস হারাতে শুরু করেছে ঈশ্বরের ওপর থেকেই। শিশু-বৃদ্ধ মিলিয়ে চার শ’র বেশি নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। তাদের অপরাধ কী?

ইসরায়েলি সৈন্যদের সঙ্গে তারা যুদ্ধে জড়ায়নি। তারপরও ঘুম থেকে উঠে সেহেরী খাওয়া হয়নি আর তাদের। যে শিশু ঈদের উপহারের স্ব্প্ন দেখে ঘুমিয়েছিল তার সেই ঘুম আর ভাঙেনি। জন্ম ফিলিস্তিনে বলেই তাদের মরতে হলে নিরপরাধ ঘুমের মধ্যে। তবে কি হিটলারের চেয়েও কম নৃশংস নয় নেহানিয়াহু? কিংবা ট্রাম্প? গাজার দুই কসাইয়ের হয়তো বিবেকই নেই।


তিনি আমাদের ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ‘ফুটবল ঈশ্বর’ বলেছিলেন, ‘হৃদয়ে আমিও ফিলিস্তিনি’। আসলে সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে শিকার হওয়া দুনিয়ার সমস্ত শোষিত মানুষ হৃদয়ে ফিলিস্তিনি।


তারপরও বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার বিশ্বাস, ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে একদিন। কারণ, লাখো শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যায় না। কারও ধ্বংস কামনা করি না, এমনকি ইসরায়েলিদেরও। শুধু চাই, সাম্রাজ্যবাদীদের হাত থেকে মুক্ত হোক মানবতা। আমারও ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, ‘খুব দূরে নয়, বিদ্যুৎ চমকের মতো হঠাৎ একদিন/আকাশ কাঁপিয়ে স্বাধীন হবে লড়াকু ফিলিস্তিন।’

সেই দিন কি খুব দূরে? জানি না। তারপ রও ভূ-খণ্ডে স্বাধীন ফিলিস্তিনের পতাকা উড়তে দেখলে ভালো লাগবে। শুধু ফিলিস্তিনের নয, তিব্বত-কাশ্মীরের মানুষগুলোর মুখে স্বাধীন হাসিও দেখতে চাই মৃত্যুর আগে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা, ইউক্রেনের ঘর হারানো মানুষগুলো নাচতে নাচতে ফিরে আসুক তাদের ঘরে। কিন্তু আমার এই সহজ ভাবনা দিয়ে কি আর দুনিয়া চলে? দুনিয়ার চাকা ঘুরে অর্থ ও ক্ষমতায়। কিন্তু আমরা যারা ক্ষমতাহীন, আমাদের চাওয়ার মূল্যটুকুও রাখতে হবে। না রাখলে রাস্তায় নামব, প্রতিবাদ করব, প্রয়োজনে শহীদ হবো। রক্ত দিয়ে হলেও আপনাকে সিংহাসনচ্যুত করব। আমাদের স্বরের ভেতর থেকেই জন্ম নেবে অসংখ্য স্বর। তারাও বলবে, ‘স্বাধীনতা চায় ফিলিস্তিনের।’

হয়তো বোবাকালা ঈশ্বর বোমার আঘাতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন ফিলিস্তিনের শিশুদের শরীর দেখেও চুপ করে আছেন। হয়তো তিনিও অসহায়। তবে স্বাধীনতাকামী মানুষ তো আর মরে যায়নি এখনও! এক ঈশ্বর অবশ্য শুনেছিলেন ফিলিস্তিনিদের আর্তনাদের কথা। তিনি আমাদের ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ‘ফুটবল ঈশ্বর’ বলেছিলেন, ‘হৃদয়ে আমিও ফিলিস্তিনি’। আসলে সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে শিকার হওয়া দুনিয়ার সমস্ত শোষিত মানুষ হৃদয়ে ফিলিস্তিনি। তারা সবাই চায় স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতা দেখার জন্যই আমরা বেঁচে আছি। কবি মাহমুদ দারবিশের দেশ ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে
আমরা বলতে চাই,
‘কোথাও যদি যাই কোনোদিন
একবার যাব স্বাধীন ফিলিস্তিন।’

লেখক পরিচিতি

মানুষ ডেস্ক
মানুষ ডেস্ক
শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি মানুষের মনকে করে উদার ও কোমল। যে ব্যক্তি এগুলো হৃদয়ে লালন ও চর্চা করে সে কখনও সমাজবিদ্বেষী কাজ করতে পারে না। সাহিত্য বিভিন্ন যুগের ও বিভিন্ন গোত্রের সমাজ সম্পর্কে আমাদের ধারণা দেয়। বিভিন্ন স্থানের ভাষা শিখতে সহায়তা করে। সাহিত্য মানব মনে প্রেম, বিরহ, সুখের অনুভূতি সৃষ্টি করে। অথচ শিক্ষার অভাবে আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মা-বাবা তাদের সন্তানদের শিল্প ও সাহিত্য পাঠে মন থেকে সম্মতি দেন না।
এ বিভাগের আরও লেখা

ফেসবুক পেইজ

বিজ্ঞাপন

spot_img

জনপ্রিয় লেখা

তবু ফুলেরা হাততালি দেয়

মধুপুর যেতে যেতে

বেলা শেষের দর্শন

চাইনিজ কবিতা