বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৭, ২০২৫

সুশান্ত হালদারের কবিতা

আগুন বীর্যে জীবন আমার

সু শা ন্ত হা ল দা র

ঠিক তিন শ’ বাহান্ন সেকেন্ড প’র মৃত্যু হবে আমার
এমন সংবাদে নিশ্চয়ই বিচলিত হবেন সবাই
কিন্তু আমি স্থির হলাম মৃত্যুর মুখোমুখি হবার
সব আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম বিছানায়
ফুসফুস ভরে শ্বাস নিয়ে যেই চোখ খুললাম
দেখলাম
অসংখ্য দাবানলে পুড়ে যাচ্ছে ঘর আমার
দাউদাউ আগুন থেকে উঠে আসলেন বায়ুস্থিত অশরীরী ‘ঈশ্বর’ এবার
কম্পিত বায়ু অশান্ত করে বললেন –
সর্প খচিত খোলসে তোমাকে পৃথিবীতে পাঠানো হবে আবার
এহেন কথায় আমি ভয় পেলাম,এবং
বিনয়াবনত মুখে বললাম –
‘পৃথিবী শূন্য হবে গুণগ্রাহী আপনার’
অগ্নিস্ফুলিঙ্গে শায়িত শয্যা মুহূর্তে পুড়িয়ে ফেললেন ঈশ্বর আমার
আমি উঠে বসলাম এবং বললাম –
আপনাকে কামড়িয়েই নরকে যাব এবার
ঈশ্বর থতমত খেয়ে বললেন –
বৎস্য!
আগুন অস্তিত্বে বিশ্বাস নেই তোমার
বীর্য নির্ভর জীবন নরক নামান্তর
ভেবে দেখ, পুড়বে নাকি মরবে?
আমি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম এবং বললাম –
‘পুড়ে পুড়ে ছারখার পঞ্চাশ আমার
যদি জ্বলাই জীবন হয় আবার
তবে তাই হোক, আসুন
কুণ্ডলিত আগুনেই ঝাঁপ দেব এবার’
ঈশ্বর তিন পা এগিয়ে এসে বললেন –
‘মানুষকে বিশ্বাস নাই আমার
তবুও কবি বলে
আগুন কাঙ্খিত বুকে কিঞ্চিৎ দাবানল রেখে গেলাম’
সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি
অজস্র টার্বাইনে পোড়ে গেছে খুঁটিবিহীন ঘর আমার!

গন্দম প্রীতির অধিকার

বিবেক পোড়া হাটে
সবাই আত্মপ্রচার ক্যানভাসার
মিথ্যার যে ফলন বেশি
তা দেখেছি
যখন জ্ঞান বিবর্জিত দেশে পাঠক শূন্য সব গ্রন্থাগার

ঢোক গেলা বুকে জমা করেছি কত দীর্ঘশ্বাস
চেনা মানুষ অচেনা হয়েছে
দাবানলে জবা যুঁই পুড়েছে
আঁধার ঘনিয়ে এলে রাতের জৌলুসে
শরীর ধর্মে পুরুষ ঈশ্বর ভুলেছে
অথচ আমি
মৃত্যুর খোয়াব দেখে দেখে
ভুলে গেছি গন্দম প্রীতির অধিকার!

পরিতাপ

সঙ্গম দৃশ্যে যতটা না কেঁপেছিলে
তারচেয়েও অধিক কেঁপেছিলে
নির্বোধ রাবণ যখন অসুর সম্ভাষণ করে

বড় পরিতাপ
নারায়ণী যজ্ঞে মানুষের নাই অধিকার
তবুও বিলাপ কাতর কালো গোলাপ আজ
শোক সন্তপ্ত মৌন মিছিলে হো চি মিন হয়ে উঠে !

প্রহর গোনা নক্ষত্র

আমিও হয়ত থাকবো না
তখন যদি লাল পতাকায় হু হু হাওয়া বদলে যায়
ঘন কুয়াশায় রৌদ্রের ঝিলিক যদি ক্ষিপ্ত উগ্র হয়
সমতট যদি সুনামি ভ্রুক্ষেপে তেজোদ্দীপ্ত বিপ্লবী হয়
তবে বুঝে নিও সভাসদ বন্ধুগণ….
তোমাদের অনুপস্থিতিতেই হয়ত একদিন
অসামঞ্জস্যতা খুঁজে নেবে জহুরুল আর বদুরুদ্দিন,
তবুও দিন শেষে বলতেই হয়
নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড় যেন প্রহর গোনা নক্ষত্র-ই হয়!

অভিশাপ

এত সংঘাত, এত ভাঙা ভাঙি
আগে দেখিনি,
মনে করেছিলে কেটে যাবে দিন উপাস্য ভঙ্গিতে
কে জানতো
মহাভারতের কর্ণের মতো আমাকেও স্বজন সম্মুখে
লম্পট দুর্যোধনের পক্ষ নিতে হবে?
মনে করেছিলে….
কেটে যাবে দিন ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির সান্নিধ্যে,
আসলে রাজা আর রাজ্য রক্ষার্থে…
আমাকেই কেন খাণ্ডবদাহনে তক্ষক হতে হবে?

লেখক পরিচিতি

সুশাস্ত হালদার
সুশাস্ত হালদার
বর্তমান সময়ের কবিদের মধ্যে এক উল্লেখযোগ্য নাম। কবি তার কাব্য ভাবনার পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা শব্দ বিন্যাসে ইতোঃমধ্যে পাঠকের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। কাব্যচর্চা মূলত কবি সুশান্ত হালদারকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। তাই তাকে স্বভাবজাত কবি বলা হয়। কবির অপ্রকাশিত কবিতার সংখ্যা অনেক। আশা করছি আগামীতে পাঠকের ভালোবাসায় কাব্যগ্রন্থগুলো প্রকাশিত হবে। এর মধ্যে 'অনির্বাণ' কাব্যগ্রন্থের জন্য কাব্যকথা সাহিত্য পরিষদ থেকে সাত বীরশ্রেষ্ঠ সম্মাননা-২০১৬ এবং একই সংগঠন থেকে 'ধূলিঝড়' কাব্যগ্রন্থের জন্য জাতীয় সাহিত্য সম্মাননা স্মারক - ২০১৬ সহ সাপ্তাহিক অন্যধারা সম্মাননা স্মারক - ২০১৬ অর্জন করেন।'নীলা' কাব্যগ্রন্থ'র জন্য ত্রৈমাসিক সাহিত্য দিগন্ত পুরস্কার ২০১৮ অর্জন করেন। পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বর্গীয় সুবল চন্দ্র হালদার এবং মাতা বিমলা রানী হালদারের জ্যেষ্ঠ সন্তান সুশান্ত হালদার ১০ জানুয়ারি ১৯৭৪ খ্রীস্টাব্দে মানিকগঞ্জ জেলাধীন হরিরামপুর উপজেলার সুতালড়ী ইউনিয়নের সুতালড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।কবি সুশান্ত হালদার মূলত দ্রোহ ও প্রেমের কবি। দেশ মাটি মানুষ আর ঘুণেধরা সমাজের অসঙ্গতিই তার লেখার উপজীব্য বিষয়। পদ্মার কড়াল গ্রাসে পৈতৃক ভিঁটা হারিয়ে বর্তমানে বয়ড়া ইউনিয়নের আন্ধারমানিক গ্রামে নতুন ঠিকানা স্থাপন করেছেন। তিনি পেশায় একজন সরকারি চাকুরীজীবি। বর্তমানে হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট(ই,পি,আই) পদে কর্মরত আছেন।পরিশেষে কবি সুশান্ত হালদার এর বর্ন্যাঢ্য কাব্যময় জীবন কামনা করছি। কাব্যগ্রন্থর নাম - ১) মুক্তির গান -২০১৫,আলপনা প্রকাশনী ২) লাল সবুজের ভালোবাসা - ২০১৬, মানুষ প্রকাশনী ৩) অনির্বাণ - ২০১৬, আলপনা প্রকাশনী। ৪) ধূলিঝড়-২০১৭, অন্যধারা পাবলিকেশন্স ৫) নীলা - ২০১৭, অভ্র প্রকাশ। ৬) স্মৃতির দেয়াল - ২০১৭, অভ্র প্রকাশ। ৭) বিষাদময় আকাশ - ২০১৬, ৮) নির্বাক ভালোবাসা - ২০১৬ ৯) নক্ষত্রের পতন - ২০১৮,অন্যধারা পাবলিকেশন্স। ১০) রক্তাক্ত জমিন - ২০১৮, অভ্র প্রকাশ। ১১) লালটিপ - ২০১৯, ফেস্টুন। ১২) অবন্তীকার কাছে খোলা চিঠি - ২০১৯,ফেস্টুন। ১৩) স্মৃতির হ্যাঙ্গার - ২০২০,নওরোজ সাহিত্য বিতান। ১৪) লাশকাটা ঘর - ২০২০,নন্দিতা প্রকাশ। ১৫) পুষ্পের আহাজারি - ২০২১,ভিন্নচোখ প্রকাশনী। ১৬) একটি যুদ্ধ ও প্রেম - ২০২২, ভিন্নচোখ প্রকাশনী।
এ বিভাগের আরও লেখা

তবু ফুলেরা হাততালি দেয়

মধুপুর যেতে যেতে

শৈবাল নূরের কবিতা

শুভ্র সরকারের কবিতা

রোজেন হাসানের কবিতা

অনুবাদ কবিতা

ফেসবুক পেইজ

বিজ্ঞাপন

spot_img

জনপ্রিয় লেখা

তবু ফুলেরা হাততালি দেয়

মধুপুর যেতে যেতে

বেলা শেষের দর্শন

চাইনিজ কবিতা